'স্বচ্ছতা প্রকাশে জাবি উপাচার্যের উদাসীনতা চরমে'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির কেলেংকারি, সমাবর্তন ও উন্নয়ন প্রকল্পের আয়-ব্যায়ের হিসাব সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহীতায় জাবি উপাচার্যের উদাসীনতা চরমে পৌঁছেছে।
রবিবার (০৮ অক্টোবর) বিকাল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্জে সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন ও ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহছান বলেন, উপাচার্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। নৈতিক অসচ্চরিত্রতার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিকে বরখাস্ত না করা, সমাবর্তনের আয়-ব্যায়ের হিসাব না দেয়া, ক্যাম্পাসে দল-মত নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সহবস্থান নিশ্চিত না করা ইত্যাদি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাছাড়া সম্প্রতি মওলানা ভাসানী হলে ‘মাদক সেবন ও টর্চার সেল’ নামে কুখ্যাত হয়ে উঠা ১২৬ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে একজন অছাত্র ও তার কতিপয় বর্বর সহযোগী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করলেও উপাচার্য অদ্যবধি কোন পদক্ষেপ নেননি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে গণ্ডিবদ্ধ করার নানা আয়োজনে ব্যস্ত। বিশেষভাবে, শিক্ষকসহ সকল পর্যায়ে নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একদল উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীর অযাচিত ও নজিরবিহীন হস্তক্ষেপ, উন্নয়ন প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করাসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে গণ্ডিবদ্ধ করার আয়োজনের প্রভাব ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে।
আসন্ন সিনেট নির্বাচনে অংশগ্রহন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তবুদ্ধি ও স্বাধীন জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রে পরিণত করার প্রত্যয় জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘যাবতীয় অনিয়ম দূরীকরণ, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের অংশীজনদের স্বার্থ-সংরক্ষণসহ শিক্ষা ও গবেষণাবান্ধব একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’ এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান বেহাল অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষকবৃন্দ মূল্যবান ভোট প্রদান করে শিক্ষক ঐক্য পরিষদকে বিজয়ী করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণামুখী করতে বার্ষিক গবেষণা ফান্ড গঠন ও দল-মত নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সহবস্থান নিশ্চিত করাসহ ১৩ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, সদস্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান, অধ্যাপক শামছুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক সোহেল রানা, অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক আব্দুর রব, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক নজরুর ইসলাম, অধ্যাপক আমিনুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন, সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল রকিব, সহযোগী অধ্যাপক রায়হান শরীফ প্রমুখ।
এর আগে, আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীপন্থীদের একাংশ, বিএনপিপন্থী ও বামপন্থী শিক্ষকরা সম্মিলিতভাবে ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ নামে নতুন জোট গঠন করেছেন।