০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:২৪

কমিটি ভেঙে দিয়েও থামানো যাচ্ছে না চবি ছাত্রলীগকে

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবারের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হলেও থেমে নেই বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপের সংঘাত-সংঘর্ষ। কমিটি বিলুপ্তির দুই সপ্তাহ না পেরোতেই ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই উপগ্রুপ সিক্সটি নাইন ও বিজয়ের একাংশ। শুক্রবার (০৬ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল-সংলগ্ন একটি হোটেলে খাবার খেতে গিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন।

এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর (রোববার) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির ঘোষণা করা হয়।

কমিটি বিলুপ্তির তিনদিন আগে থেকে অর্থাৎ ২১-২৪ সেপ্টেম্বর টানা চারদিন তিন গ্রুপে আট দফা সংঘর্ষ হয় ক্যাম্পাসে। পরে টালমাটাল ছাত্রলীগের এই ইউনিটকে সামাল দিতে না পেরে কমিটি বিলুপ্তির এ ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার পরে আমরা পরিস্থিতি শান্ত করে দিয়েছি। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। -প্রক্টর

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই ৪২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এদিকে, এ কমিটি ভেঙে দিয়েও থামানো যাচ্ছে না বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপের সংঘাত-সংঘর্ষ। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে জড়ায় শাখা ছাত্রলীগের গ্রুপ দুটি সিক্সটি নাইন ও বিজয়। পৌনে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

আরও পড়ুন: ডালের বাটিতে ধাক্কার জেরে দু'ঘন্টা সংঘর্ষ চবি ছাত্রলীগের, আহত ২০

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার পরে আমরা পরিস্থিতি শান্ত করে দিয়েছি। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যারা দেশীয় অস্ত্র হাতে এই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিক্সটি নাইন গ্রুপটি সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং বিজয় গ্রুপটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সংঘর্ষের সময় সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মীরা শাহ জালাল ও আমানত হলের সামনে এবং বিজয় গ্রুপের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হল মোড়ে অবস্থান নিয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে ক্যাম্পাসের একটি হোটেলে খাবার শেষে টেবিল থেকে বের হবার সময় সিক্সটি-নাইন গ্রুপের কর্মী আজমিরের হাতের ধাক্কা লেগে টেবিলের ওপরে থাকা ডালের বাটি পড়ে যায়। এ বিষয়টি নিয়ে বিজয় গ্রুপের কর্মী মাহিরের সঙ্গে আজমিরের কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে দুই গ্রুপে উত্তেজনা ছড়ালে বিকেলে সংঘর্ষে জড়ায় কর্মীরা।

সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম সাইদ বলেন, আমাদের এক ছোট ভাই আজমিরকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের কিছু ছেলে গায়ে হাত তুলেছে। আমরা তারপরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের ছেলেদের হলে রেখেছিলাম।

ক্যাম্পাসে এখন ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। অনেকে এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ক্যাম্পাসে ঝামেলাগুলো লাগিয়ে রেখেছে। -রেজাউল হক রুবেল

সাইদুল ইসলাম সাইদ বলেন, পরে ওদের ছেলেরা সোহরাওয়ার্দী হলের ক্যান্টিনের সামনে এসে উস্কানিমূলক আচরণ করে। ওদের ছেলেরা অগ্রসর হলে তার প্রেক্ষিতে আমাদের ছেলেরা প্রতিহত করে। আমরা সিনিয়ররা পরিস্থিতি শান্ত করে সংঘর্ষ আর বড় হতে দেই নাই।

বিজয় গ্রুপের নেতা শাখাওয়াত হোসাইন বলেন, এটা ভুল বোঝাবোঝির কারণে হয়েছে। আমি চেয়েছি ঝামেলাটা না বাড়ানোর জন্য। কিন্তু বিপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোতিদভাবে ঝামেলা করতে আসে। পরে আমাদের হলের সবাই প্রতিহত করে। তাদের সিনিয়দের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ক্যাম্পাসে এখন ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। খাবারের টেবিলে বসা নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। আমাদের কাছে এখন একটি বিষয় পরিষ্কার, অনেকে এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ক্যাম্পাসে ঝামেলাগুলো লাগিয়ে রেখেছে। ভুক্তভোগী হতে হয়েছে ছাত্রলীগকে।