আইনের অপব্যবহার করে কারো অধিকার খর্ব করা যাবে না: এনায়েতুর রহিম
বিদ্যমান কোনো আইনের অপব্যবহার করে কারো অধিকার খর্ব করা যাবে না। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, পক্ষপাতশূন্য এবং দ্রুত বিচার হলো একটি মৌলিক অধিকার। সেই সঙ্গে সাহয্যকামী মানুষের চূড়ান্ত অধিকার নিশ্চিত করতে বিচার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বিচারক ও সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত। এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিচারক এম. এনায়েতুর রহিম বলেন, যদি নাগরিকরা নিজেদের নিরাপদ মনে করে, তাহলে একটি সমাজ স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ থাকে। এটা নিশ্চিত করতে সুশাসনের কোনো বিকল্প নাই। সুশাসন মানবাধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট। কার্যকর এবং সুশাসনের অনুপস্থিতিতে সমাজের সকল বিভাগ নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করে, যা তাদেরকে সমাজিক ন্যায়বিচার এবং আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সামিল।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার রাজনৈতিক, দেওয়ানি, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকারগুলো মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবশ্যই সকলের এই অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে সজাগ থাকতে হবে। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যেগুলো আমাদের সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাষ্ট্রের সকল বিভাগকে এই অধিকারগুলো নিশ্চিত করা থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ নির্বিশেষে রাষ্ট্র সকল নাগরিকের।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১-এর সভাপতি বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান বাড়ানো এবং মানবাধিকারের কার্যকর উন্নতির প্রতি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিচালিত করতে হবে। মানবাধিকারকে শিক্ষা কারিকুলামের অংশ করলে, সেটা নতুন প্রজন্মের মনজগত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নতুন প্রজন্মের সক্ষমতা যথাযথভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে তারা মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার রক্ষা ও অগ্রসর করতে কাজ করতে পারে।
রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান গভারনেন্সের ফাউন্ডিং ডিরেক্টর অধ্যাপক দাউদ হাসান, রাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর।
এসময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সভাপতি ড. মিজানুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামানিক, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল হান্নান এবং আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দেশি-বিদেশি গবেষকরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষের দিকে বিগত চারটি বিজেএস পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকারী রাবি শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
কনফারেন্সের আয়োজক সূত্রে জানা যায়, রাবি আইন অনুষদের সহযোগীতায় ও আইন বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত 'হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড সোশ্যাল জাস্টিস: কি ইস্যুজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেজ ২০২৩' শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সটি চলবে শনিবার রাত পর্যন্ত।
কনফারেন্সে দেশি বিদেশি ২২টা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট সাড়ে চারশো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। এরমধ্যে ১২১ জন গবেষক আইনের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে ৯৩টা গবেষণাপত্র উপস্থাপন করবেন। চারটি ভেন্যুতে প্রথমদিন ৫০টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় দিন ৪৩টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে।