জাবিতে উপাচার্যের স্বজনপ্রীতিতে বিভক্ত আওয়ামীপন্থীরা, নতুন দলের ঘোষণা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ নামে একটি সংগঠন থাকলেও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নামে আরেকটি সংগঠনের ঘোষণা দিয়েছে তাদের একাংশ।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন সংগঠনের ব্যাপারটি জানানো হয়।
এই সংগঠনের আহবায়ক হয়েছেন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন এর অধ্যাপক মোতাহার হোসেন ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক খোঃ লুৎফুল এলাহী। এছাড়াও এই কমিটিতে আরও ৭ জন সদস্য রয়েছেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, আইবিএ এর অধ্যাপক আইরিন আক্তার, সহযোগী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মার্লিহা নার্গিস আহমেদ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরীন জলি, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন এবং জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহনের পর কতিপয় সুবিধাবাদী শিক্ষকের ইন্ধনে আওয়ামীপন্থী জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের আস্থায় না নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটায়। এভাবে গত বছরের ১১ অক্টোবর বিতর্কিতদের দিয়ে সংগঠনটির নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। এতে তিনি নিজের ব্যক্তি ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে সংগঠনটিকে ব্যবহার করতে চরম স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।’
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি দেখান ও বিতর্কিতদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর উপাচার্য তাঁর নিজ ভাই পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুনকে সংগঠনের আহবায়ক করে বিজ্ঞপ্তি দেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগে বিতর্কের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, গত এক বছরে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্য ভীষণভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ও বাইরে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এছাড়া উপাচার্যের পেশাদারিত্ব নিয়ে বলা হয়, ‘সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে তিনি সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতির নির্বাচনী বোর্ডে যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে একাডেমিক ইথিকস ও পেশাদারিত্বের অভাব দেখিয়েছেন।’
উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এ ধরণের বক্তব্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, উপাচার্য পদ ও সরকারের জন্য ভীষণ অসম্মানজনক ও বিব্রতকর। আমরা বিশ্বাস করতে চাইনা যে, এ অভিযোগ সত্য। তবে উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাবের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য আমরা রাষ্ট্রের যথাযথ কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।’
নতুন সংগঠনের আহবায়ক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, 'আমরা বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকের কাছে নির্মোহভাবে উপস্থাপন করতে চাই। এই নতুন সংগঠন নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আসন্ন সিনেট নির্বাচনে সকলের সমর্থন ও সহযোগীতা কামনা করছি।
জানা গেছে, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের নতুন এই সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এর আগে, ২০১৮ সালে আওয়ামীপন্থীরা সম্মিলিতভাবে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ গঠন করেছিলেন।
এ বিষয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের’ আহ্বায়ক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতির যে অভিযোগ তারা করছে আমি তাদের শুধু বলতে চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কি কোন নিজস্ব অস্তিত্ব নাই? আমি কি শুধুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের ভাই হিসেবে পরিচিত? আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলাম, সিনেট প্যানেলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি, গত শিক্ষক সমিতির সদস্যপদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি। তাহলে আমার পরিচয় কি শুধুই উপাচার্যের ভাই হিসেবে না আমার অন্য কোন পরিচয় আছে?
নতুন সংগঠনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি যেহেতু সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে একজন প্রার্থী। তাই নির্বাচন প্রাক্কালে নতুন এ সংগঠন নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।