ক্ষোভ থাকলে আমাকে মারবে তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনিস ভাঙবে না
সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ঘটা তাণ্ডব স্মরণ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, তোমাদের ক্ষোভ থাকলে আমাকে মারবে তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনিস ভাঙবে না। সরকারি সম্পদ নষ্ট করবে না।
আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস উপলক্ষ্যে 'বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-সংঘাত-অসহিঞ্চুতার প্রেক্ষাপটে গান্ধীজির অহিংস দর্শন ও আদর্শবাদ' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল সোমবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের আয়োজনে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার আরও বলেন, আমার মেয়ে আমাকে বলে-মা মানুষকে ক্ষমা করতে হয়। আমিও আমার শিক্ষার্থীদের প্রতি রাগ রাখি না। আমি দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন সাংস্কৃতিক আয়োজন হয় তখন আমার শিক্ষার্থীরা কত ভদ্র, প্রাঞ্জলভাবে তাতে অংশ নেই। দোষটা আমারা তাদের অহিংসার শিক্ষা দিতে পারিনি। আমাদেরকে শিক্ষার্থীদের মাঝে অহিংসার কথা বলতে হবে
ড. শিরীন আখতার বলেন, গান্ধীজি নামটা শুনলে লাঠি হাতে আমাদের সাদা একজন মানুষের চিত্র ভেসে ওঠে। যিনি সারা জীবন অহিংসার জন্য আন্দোলন করেছেন। জাত পাতের কথা ভুলে একজন হিন্দু হয়েও মুসলমানের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। আমাদের গান্ধিজির অহিংসা নীতি অনুসরণ করতে হবে।
তিনি উপস্থিত সকলের কাছে আহবান রাখেন, আসুন আমরা আমাদের চারপাশে যারা আছে সবার সাথে ভালো কথা বলি।তাদের মহা মানবের কথা বলি,ভালোবাসার কথা বলি। তাহলে পৃথিবীতে অহিংসা ছড়াবে,হানাহানি থাকবে না।
প্রদীপ কুমারের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি তাপস হোড়। সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে ছোটকাট বিষয় নিয়ে আমরা সংঘাতে জড়াচ্ছি। আমরা একে অন্যকে সহ্য করতে পারিনা। আমাদের মধ্যে এ ধরনের হিংসামূলক আচরণ এটা একেবারেই কাম্য নয়। আজকের এ দিবস থেকে আমরা একটা জিনিস শিখতে চাই তা হলো সহ্য করার মন-মানসিকতা গড়ে তোলা। সহিংসতা নয় শান্তির মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করা। এটা আমাদের নিজের মধ্যে আয়ত্ত করতে হবে। তাহলে আমরা অহিংস বাংলাদেশ গড়তে পারবো।
বক্তারা আরও বলেন, প্রতিবছর ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে বিশ্ব অহিংস দিবস পালন করা হচ্ছে। ২০০৭ সালে সোনিয়া গান্ধী জাতিসংঘে সিদ্ধান্তটি পেশ করেন ও ওই বছরের ১৫ জুন দিবসটি ঘোষণা করা হয়। ২০০৪ সালে জাতিসংঘ এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরজন্য তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব শিরীন এবাদির ভূমিকা আছে। বিশ্বে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি লেগেই আছে। আজকের এ দিবস থেকেই আমরা অহিংসার শিক্ষা পাবো যা নিয়ে পুরো বাংলাদেশকে শান্তির নীড় হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।
সভায় উদ্বোধক ছিলেন দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক আবুল মোমেন। বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি তারিকুল ইসলাম জুয়েলের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপক করেন শরিফা সিদ্দিকী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শিমুল বড়ুয়া। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ড. সুদীপা দত্ত, প্রফেসর ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিল নাজমুল হক ডিউক, রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট ড. মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী।