২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২৭

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ

গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন  © ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সংঘর্ষ যেন কোনভাবেই থামছে না। পান থেকে চুন খসলেই সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত খোদ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও। সর্বশেষ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল হাটহাজারীর মেখলে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। উপমন্ত্রী আসার খবরে বগিভিক্তিক উপগ্রুপ বিজয় ও সিএফসি উপগ্রুপের একাংশ অভ্যর্থনা জানাতে এক নাম্বার গেট এলাকায় অবস্থান নেয়। নেতাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেরার পথে সন্ধ্যা ৭টায় দুই গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে।

একইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ক্যাম্পাসে বগিভিক্তিক উপগ্রুপ সিক্সটি নাইন ও সিএফসি উপগ্রুপের একাংশের মাঝে ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনার ঘটে। সেসময় সিক্সটি নাইন শাহ জালাল ও সিএফসি উপগ্রুপের সাদাফ পন্থিরা শাহ আমনত হলে অবস্থান নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। এসময় উভয় পক্ষের হাতে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শাখা ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন সাবেক নেতারা।

তুচ্ছ কারণে কয়দিন পরপর চবির পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছেন ছাত্রলীগের নেতারা। -খোরশেদ আলম সুজন

গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) পূর্ব ঘটনার জেরে বিকেল সাড়ে ৪টায় ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি নাইন ও সিএফসি উপগ্রুপের কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৬ জন আহত হয়। 

সংঘর্ষগুলোর কারণ হিসেবে শাখা ছাত্রলীগের নেতারা একে অপরকে দুষছেন। এতে বিরক্ত প্রশাসনও। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সামনেই একপক্ষ অপরপক্ষের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে রাত ১০টায় প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে শাহজালাল ও  শাহ আমানত হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেসময় পুলিশ বিপুল দেশীয় অস্ত্রসহ ৫ বহিরাগতকে আটক করে।

প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, আমরা পুলিশের সহযোগিতায় দুটি হলে তল্লাশি চালিয়েছি। সেখানে কয়েকটি কক্ষ থেকে হকিস্টিক, রামদা, লোহার রড, পাইপ, লাঠিসোঁটা, পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ পাঁচজন বহিরাগতকে আটক করেছে। তাদের থানায় নেয়া হয়েছে। আমরা এখনও তাদের পরিচয় নিশ্চিত হইনি।

গত কয়েক দিনে সংঘর্ষে জড়ানো বিবদমান গ্রুপগুলো হলো সিক্সটি নাইন, বিজয় ও সিএফসি। এদেরমধ্যে সিক্সটি নাইন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল টিপু ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। অন্যদিকে বিজয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসাইনের অনুসারী।

সিএফসি দুইটি ধারায় বিভক্ত। একটি ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। আরেকটি ধারার নেতৃত্বে আছেন শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মির্জা খবির সাদাফ। শাহ আমানত হলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সাদাফের হাতে আর রুবেলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শহীদ আব্দুর রব হল। বিজয় ও সিএফসি দুটোই আবার শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুন: 'ছাত্রলীগ ভীতি': ২ বছর ধরে ক্যাম্পাস ছাড়া চবি ছাত্রদল

পরিসংখ্যান বলছে, বিগত ১৫ বছরে অন্তত ৬০০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। এতে আহত হয়েছেন অন্তত এক হাজার নেতা-কর্মী।

ছাত্রলীগের এমন কর্মকান্ডে বিব্রত কেন্দ্রীয় নেতারা। ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে ফোন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। ফোনে তিনি সাদ্দামকে চবি ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ দেন।

চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম বলেন, ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি ছাত্রলীগের সে গৌরবময় ইতিহাসকে ভূলুণ্ঠিত করছে কতিপয় ছাত্রনেতা। তুচ্ছ কারণে কয়দিন পরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছেন তারা। বছরের পর বছর ধরে পড়ালেখার নামে ক্যাম্পাসে অবস্থান করে ক্যাম্পাসকে তাদের স্বার্থ হাসিলের ঠিকানা হিসেবে পরিণত করেছে। তাদের এহেন আচরণে দল ও সরকার চরমভাবে বিব্রত।

বিগত ১৫ বছরে অন্তত ৬০০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। এতে আহত হয়েছেন অন্তত এক হাজার নেতা-কর্মী। -পরিসংখ্যান

তিনি বলেন, তাদের এসব সংঘর্ষের সাথে সাধারণ ছাত্রদের কোন সম্পর্ক নেই। মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই তাদের এসব সংঘাত ও সংঘর্ষ। নামধারী সন্ত্রাসীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকসহ বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত। নচেৎ ছাত্র না হয়েও বছরের পর বছর কীভাবে ক্যাম্পাসে তারা আধিপত্য বিস্তার করছে। কিছু সংখ্যক ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী চক্র সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে এই কমিটি ভেঙে দিতে বলেছেন বলে জানিয়েছেন চবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু। গত ৯ সেপ্টম্বর শাটলে শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় ক্যাম্পাসে ঘটা তাণ্ডবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সহমর্মিতা জানাতে এসে তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বহুদিন ধরে পুরাতন কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়ার সুপারিশ করেছেন বলে নাছির গ্রুপের একাধিক নেতা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন।