বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা পিতার সমতুল্য হলে ছাত্রীদের কেন বিয়ে করে?
গত মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কান ও মুখমণ্ডল খোলা রাখার বিষয়ে এক আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ। তাতে বলা হয়েছিল, শিক্ষকরা পিতার সমতুল্য। সেজন্য পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য তারা ছাত্রীদের মুখমণ্ডল দেখতে পারেন।
তবে এই আদেশের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু। আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ‘হিজাবোফোবিয়া: নারীর উচ্চশিক্ষার পথে অন্তরায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এই আপত্তি তোলেন।
হিজাব-নিকাবের বিষয়ে আপত্তি তোলা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, পরিচয় দেয়ার সময় পরিচয় দেন আমার নাম অমুক মুসলিম, আবার বলার চেষ্টা করেন আপনি মুসলিম। আবার এখানে (হিজাব-নিকাব পালনের ক্ষেত্রে) এসে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আপনি ব্যক্তিগতভাবে কম-বেশি আমল করেন সেটায় কিছু আসে যায় না। কিন্তু আপনি আমার ইসলাম পালন করার অধিকার, যেটি সংবিধান প্রদত্ত ইসলামের একটি দায়িত্ব—সেটি পালনে বাঁধা দিবেন।
“সেক্ষেত্রে আপনি বলার চেষ্টা করবেন, শিক্ষক তো বাবার সমতুল্য। এটা কোর্টও বলেন, যা খুবই ফানি। সেটি খুবই অপ্রত্যাশিত বক্তব্যও। কোর্ট এরকম কথা বলতেই পারেন না। কোর্টের এরকম কথা বলার অধিকার নেই; যে বলবেন, শিক্ষকরা বাবার সমতুল্য, তাহলে আপনি রায় দেন শিক্ষক হচ্ছে বাবা, শিক্ষক তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবেন না।”
আরও পড়ুন: হিজাব ইস্যুতে ফের মাঠে নামছেন ঢাবির নারী শিক্ষার্থীরা
তিনি আরও বলেন, আমার ঢাবির কত শিক্ষক তার ছাত্রীকে বিয়ে করছেন। এখন সেটা কোন আইনে নেবেন? বাবা কি তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারেন? এখন আমরা শিক্ষকদের উন্মাদ বলছি, তাহলে এখন বিচারপতিদেরকে আমরা উন্মাদ বলবো কিনা? এরকম উন্মদনা চলবে না। স্বাধীনতার এতো বছর পরে এসেও আমরা এরকম উন্মাদনার কথা শুনতে চাই না।
সেমিনারে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, আমাদের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবীরা অধিকারের কথা বলে। তবে অধিকার তাদের বিপক্ষে গেলে তারা সেটির বিরোধিতা করে। হিজাবের কথা বললে গোঁড়া বলে। মূলত হিজাবের যারা বাধা দিচ্ছে, তারা সেকুলার নয় বরং ধর্ম ও ইসলামবিদ্বেষী।
তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই। রাষ্ট্র ইবাদতে হস্তক্ষেপে করছে না বটে, তবে ধর্মীয় আইনের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছে। আমরা সেকুলার শ্রেণির হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। এটা আমাদের দোষ। আমাদের দেশ আমাদের মতে চলবে। কিন্তু যারা দেশ চালায় তারা আমাদের জনগণের মত নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছে না। তারা তাদের মতো করে চালাতে চায়। আমাদের উচিত, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে অনাচার, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলা।
বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা হিজাব পরতে পারবেন কি পারবেন না সেজন্য সংবিধান দেখতে হচ্ছে। বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভূখণ্ডে ইসলামী সংস্কৃতি মেনে চলতে পারব কিনা, নারীরা বোরকা-হিজাব পরতে পারবে কিনা সেজন্য সংবিধান দেখতে হচ্ছে, আদালতে মামলা করতে হচ্ছে। কিছুদিন পর আমাদের দাড়ি-টুপি ও নামাজ পড়ার জন্য সংবিধান দেখতে হবে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাবির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক কামরুল হাসান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ফয়জুল্লাহ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী মিশকাতুল জান্নাত ও ইসলামিক স্টাডিজের তাবাসসুম রূপা, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সভাপতি মুফতি জাকির হোসাইন প্রমুখ।