চবির তাণ্ডবে জড়িত ছাত্রলীগের ৩টি গ্রুপ, আসামি ১৪
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে শিক্ষার্থী পড়ে আহত হওয়ার পর যে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক তিনটি গ্রুপের সদস্যরা। এ ঘটনায় গেল শনিবার রাতে দুটি মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে ১৪ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ১২ জনই সংগঠনটির নেতাকর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনার পর ক্যাম্পাসজুড়ে নজিরবিহীন ভাঙচুর চলে। বাদ যায়নি উপাচার্যের বাসভবনও। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার গুজব ওঠার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠে আন্দোলনকারীরা।
এদিকে, দুর্ঘটনা ও ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এই কমিটি গঠন করেছেন বলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদ স্বাক্ষরিত দুটি বিবৃতি থেকে জানা গেছে।
এজাহার অনুযায়ী উপাচার্যের বাসভবন ও শিক্ষক ক্লাব ভাঙচুরের মামলার আসামিরা হলেন- ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন আইমুন, সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের দীপন বণিক দীপ্ত, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রিয়াদ হাসান রাব্বি, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নুর মোহাম্মদ মান্না, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সৌরভ ভূইয়া, পালি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আমিনুল ইসলাম ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শফিকুল ইসলাম। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০-৬০০ জন শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক।
পরিবহণ দফতরে ভাঙচুরের অন্য মামলার আসামিরা হলেন- দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সাজ্জাদ হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মো. ইমরান নাজির ইমন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আনিছুর রহমান, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নাসির উদ্দিন মো. সিফাত উল্লাহ, সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনিক দাশ, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনিরুদ্ধ বিশ্বাস ও একই বিভাগ-শিক্ষাবর্ষের মো. আজিমুজ্জামান। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদ।
দুই মামলায় উল্লিখিত ১৪ জনের ৬ জন ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন উপগ্রুপের, ৫ জন চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি), ১ জন বিজয় ও ২ জন সাধারণ ছাত্র।
প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, মামলা তদন্তাধীন, পুলিশ বিষয়টি দেখছে। হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, একটি নাম পরিবর্তনের আবেদন এসেছে। তদন্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, মামলার আসামিদের নাম গায়েবিভাবে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন চবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সিএফসি উপগ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদাব খান বলেন, মামলায় আসামিদের নাম কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, চবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। যারা এ কাজ করেছে তারা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত জায়গা থেকেই ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের দায় নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে ভাঙচুরের ঘটনায় কার কার ইন্ধন আছে তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।