শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্নখাতে নিতে এ বীভৎস হামলা: ছাত্রলীগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শাটলের বগি বৃদ্ধি, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ যৌক্তিক আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ক্যাম্পাসে বীভৎস হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। ক্যাম্পাসে হামলার বিষয়ে রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রেজাউল হক রুবেল বলেন, ক্যাম্পাসে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেটি অবশ্যই নিন্দনীয়। যৌক্তিক দাবি আদায়ে যেকোনো আন্দোলন হতেই পারে। কিন্তু সে আন্দোলন কোনোভাবে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুর, সরকারি সম্পদ নষ্ট কিংবা অগ্নিসংযোগ করে হতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলনের অনেক পথ রয়েছে। সে সব পথে না গিয়ে সহিংস পথ যারা বেচে নিয়েছেন তারা অবশ্যই অশুভ শক্তি। যারা এই কাজের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
আমি বাসায় থাকলে আমাকেও মেরে ফেলতো। যারাই রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। -চবি উপাচার্য
এর আগে, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতের শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে চবি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়।
এমন ‘বীভৎস ঘটনা’ কোনোভাবে এড়ানো যেত কি না জানতে চাইলে রেজাউল বলেন, যৌক্তিক দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করছিল। যেহেতু আমাদের কয়েকজন ভাই আহত হয়েছেন, তাদের রক্ত ঝরেছে—সেসব দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দাড়াতেই পারে। কিন্তু এ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নেওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য লুটপাটটা করেছে। এ সহিংসতায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না।
এ হামলা ‘অশুভ শক্তির পূর্বপরিকল্পিত’ বলে দাবি করেন চবি ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল। তিনি বলেন, একটা আন্দোলন প্রতিহত করতে কেউ যদি লাঠিচার্জ করে তবে সেখানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এখানে তেমন কিছুই হয়নি। সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে একটি পক্ষ ভিসির বাসভবন, টিচার্স ক্লাব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে একটি পক্ষ ভিসির বাসভবন, টিচার্স ক্লাব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। -চবি ছাত্রলীগ সভাপতি রেজিউল হক রুবেল
ক্যাম্পাসে এ তাণ্ডব চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোথায় ছিলেন? তারা এ হামলা প্রতিহত করতে কী ভূমিকা রেখেছেন জানতে চাইলে এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল। তবে সহিংসতায় জড়িতদের ধরতে প্রশাসনকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অনেক গোয়েন্দা সংস্থা আছে। তারা এটার সাথে কারা জড়িত খুঁজে বের করবে। প্রয়োজনে ছাত্রলীগও তাদের সহয়তা দেবে।
ভাঙচুরের ঘটনায় দুই মামলা, আসামি অজ্ঞাত পাঁচ শতাধিক
বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনার পর ক্যাম্পাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আলাদা ৩টি মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় আরও মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া
রাতের শাটল ট্রেনে শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। তিনি বলেছেন, আমি বাসায় থাকলে আমাকেও মেরে ফেলতো। যারাই রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপাচার্য আরও বলেন, আমাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিকভাবে চলবে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। এছাড়া আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের যাবতীয় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রশাসন করছে।