০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:২৫

রাবিতে কৃষকদের নিয়ে গবেষণা

রাবিতে কৃষক গবেষণা ফলাফল সম্পর্কিত সেমিনার  © টিডিসি ফটো

করোনাকালীন সময়ে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ছিল অনেকটা কঠিন। এসময় দেশের ২৭ শতাংশ মানুষের উৎপাদন কমেছে। আর ব্যয় বাড়লেও আয় কমেছে ৭৩ শতাংশ কৃষিজীবী মানুষের। এমনকি করোনাকালীন সময়ে ব্যয় কমাতে ১৩ শতাংশ কৃষক তাদের কোনো না কোনো বেলার খাবার পরিহার করেছেন। ওই সময় সরকার থেকে কৃষকদের সহযোগিতা করা হলেও তা যথেষ্ঠ ছিল না বলে মনে করেন ৯৩ শতাংশ কৃষক। তবে ক্রান্তিকালীন সময়ে যারা সোলার ইরিগেশন ব্যবহার করেছে তাদের অবস্থা ছিল তুলনামূলক ভালো।  
 
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকাল ৪টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সে আয়োজিত একটি গবেষণা ফলাফল সম্পর্কিত সেমিনারের পেপার প্রেজেন্টেশনে এসব তথ্য উঠে আসে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল নিয়ে করা হয়েছে গবেষণাটি। যেখানে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর ও কুড়িগ্রামের ৪২৫ জন কৃষকের তথ্য নেওয়া হয়েছে। এতে ফান্ডিং করেছে ‘অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ' (এসিআইএআর) নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।    

গবেষণাটির বিষয় ছিল ‘দ্যা ইমপ্যাক্টস অব কোভিড-১৯ অন স্মলহোল্ডার ফার্ম হাউসহোল্ডস ইন বাংলাদেশ: ডাজ অ্যাডোপশোন অব সোলার ইরিগেশন টেকনোলজি মেক ফার্মার বেটার রেজিলেন্ট?’

সেমিনারে গবেষণা পেপার উপস্থাপন করেন এই গবেষণার প্রধান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান।

তিনি তাঁর পেপার উপস্থাপনায় বলেন, রাজশাহী, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের ওপর ঐ সময়ে সমীক্ষা চালানো হয়। এতে এই অঞ্চলের অল্প জমিতে ফসল ফলানো কৃষকরা কী কী বিষয়ে সমস্যা মোকাবিলা করেছে তা উঠে এসেছে। করোনাকালীন সময়ে যাতায়াত সমস্যা, বিভিন্ন জায়গায় প্রাদুর্ভাব কমাতে কারফিউ, অসুস্থ ব্যক্তিদের ও তাদের পরিবার জনসম্মুখে বের হতে না পারাসহ বেশকিছু কারণে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করতে পারেনি। এতে ফসল উৎপাদনে ভাটা পড়েছে বলে মনে করেছেন দেশের ২৭% কৃষক। বাকিরা বলেছেন উৎপাদন হয়েছে তবে তা সন্তোষজনক না। এছাড়া ফসলে ভালো দাম না থাকা, কিটনাশক, সার আমদানিতে বেশ সমস্যায় পড়েছিলেন কৃষকরা। গুণতে হয়েছে বাড়তি টাকা। এতে ব্যয় বাড়লেও আয় কমেছে বলে ধারণা পোষণ করেছেন ৭৩% কৃষিজীবি মানুষ।

এমনকি কোভিডকালীন সময়ে ব্যয় কমাতে ১৩% কৃষক খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে মিল স্কিপ করেছেন। এসময় সরকার থেকে কৃষকদের সহযোগিতা করলেও তা যথেষ্ঠ নয় বলে মনে করেন ৯৩% ক্ষুদ্র কৃষিজীবীরা। এছাড়াও তিনি তাঁর গবেষণা বিশ্লেষণে বলেন, ওই সময় যারা সৌর সেচ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল তারা প্রচলিত চাষ পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের থেকে ভালো ছিল। তাই এই উন্নত পদ্ধতির ব্যবহার ক্রান্তিকালীন সময়ে কৃষকদের সহায়তা করার জন্য উন্নত সরকারী নীতির নিশ্চয়তা হতে পারে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, কোভিড যতদিন ছিল আমরা নিরাশ ছিলাম এই নিয়ে যে আমরা শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকবো কি না। আমরা এই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারবো কি না। সেসময় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মাঝে আশা জাগিয়ে রেখেছিলেন। শুধু এশিয়া না পুরো বিশ্বের মাঝে আমরা সেসময়ে মাথা উঁচু করে রেখেছিলাম। আমাদের যা কিছু প্রয়োজন, তা আমাদের জন্য সহজলভ্য করে দিয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তবে আমরা এমন এক জাতি। কোনো কিছুই মনে রাখি না। সুফল কুফল ২টাই ভুলে যাই।
 
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, কৃষি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণ। এটা আমাদের অর্থনীতির লাইফ লাইন। উন্নয়ন বলতে আমরা একটা ন্যাচারাল প্রগ্রেশনের কথা বলি। কৃষিভিত্তিক একটা সমাজ ট্রান্সফরমেশন হয়ে শিল্প সমাজের দিকে যায়। সেখান থেকে সার্ভিস বেজড অর্থনীতির দিকে যায়। কিন্তু কৃষির গুরুত্ব কখনো কমে না। কৃষিকে বার বার উপেক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু কৃষি নিজেই বার বার প্রমাণ করেছে যে, তাকে যতই উপেক্ষা করা হোক না কেনো কৃষিই এ দেশের মানুষের আশ্রয়স্থল। কোভিডের সময়ও তা প্রমাণ হয়েছে। ওই সময় যারা ঢাকায় বসবাস করেছিল, যাদের চাকরি নাই, ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ, কোম্পানি বন্ধ তারা তাদের বাচ্চার স্কুল থেকে ভর্তি বাতিল করে গ্রামে চলে গেছে। কোভিডের আমলে বাংলাদেশের মানুষের জীবনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু কৃষিই তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। গ্রামীন অর্থনীতি তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কৃষি নিয়েই এই প্রকল্পটি। আমরা সব সময় এটাকে সাধুবাদ জানায় ।   

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-এর রাজশাহী জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার উম্মে সালমা, বিএমডিএ’র সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. শরিফুল হক প্রমুখ। অরুপ ব্যানার্জির সঞ্চালনায় এসময় বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এই গবেষণায় মেন্টর হিসেবে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার অধ্যাপক ড. কে. এম. লরা লুডজেন সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া রাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুুর রশিদ সরকার, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুরশিদা ফেরদৌসি হাবিব, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজি নেওয়াজ মোস্তফা এবং অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অরুপ ব্যানার্জি এ গবেষণায় সহযোগিতা করেন।