ছাত্রলীগের সম্মেলন: নেতা-কর্মী আর বাসের দখলে ঢাবি ক্যাম্পাস
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশকে কেন্দ্র করে অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক নেতা-কর্মীর আগমন হবে বলে জানিয়েছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। আজ শুক্রবারের (১ সেপ্টেম্বর) সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আসছেন দেশের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। তারা বাসে এসে সিংহভাগই অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ফলে ক্যাম্পাস এখন বহিরাগত নেতা-কর্মী আর যানবাহনের দখলে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও ভোরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন বাস, মাইক্রোসহ বিভিন্ন যানবাহন ভর্তি নেতা-কর্মী। তারা পুরো ক্যাম্পাসে অবাধ চলাচল, মিছিল, স্লোগান ও গাড়ি পার্কিং করে রেখেছেন। এতে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশেষ করে, আবাসিক হলের ক্যান্টিন, দোকান ও ওয়াশরুম ব্যবহার করতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাবির প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান নিয়েছেন। বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নিজেদের অবস্থান জানান দিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
তবে সমাবেশের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন হলগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মীরা বিশ্রাম, গোসল ও খাওয়া-দাওয়া করতে হলগুলোতে আসছেন। শিক্ষার্থীরা বাইরে জিনিসপত্র রাখায় অনেকে তা ব্যবহার করছেন। ওয়াশরুমগুলোতে পড়ে যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন। গেস্টরুমও নেতা-কর্মীদের দখলে।
এক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ‘সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নিজেকে বহিরাগতদের মতো লাগছে। ওয়াশরুমে ঢুকতে না ঢুকতেই এক ভাই বলে ফেলল, আরে মিয়া এতক্ষণ লাগে?’
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার পবিত্র জুমার দিন হওয়ায় ভোগান্তি ড়েছে। ক্যান্টিন ও খাবারের দোকানও নেতা-কর্মীদের দখলে। সকালের খাবার খেতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সময়ের আগেই শেষ হয়ে যায় খাবার। অনেকে বাইরে থেকে প্যাকেট খাবার এনে ক্যাম্পাসে খেয়ে ফেলে যাচ্ছেন। জসীমউদ্দিন হলের মাঠে সিরিয়াল ধরে বসে খেয়ে ময়লা ফেলে গেছেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে খাবারের প্যাকেট ও ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের মাঠে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গাড়িতে পূর্ণ হয়ে গেছে। মল চত্বর, জহুরুল হক হলের রাস্তা, ভিসি চত্বর থেকে প্রতিটি রাস্তায় সারি সারি বাস ও মাইক্রোবাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের হলের ক্যান্টিন ও দোকানগুলোতে সিরিয়াল থাকায় সকাল থেকেই খাবার পাওয়া যায়নি। হলের ওয়াশরুমের একদম বাজে অবস্থা করে রাখা হয়েছে। বিনা অনুমতিতে আমাদের গামছা ব্যবহার করা শুরু করেছে বহিরাগতরা।’
সূর্যসেন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সকাল থেকেই হলের ওয়াশরুম, গেস্টরুম, ক্যান্টিন সবই তাদের নিয়ন্ত্রনে চলে গেছে। আজকে নিজেকে বহিরাগত মনে হচ্ছে। সকালে খেতে গিয়েও লম্বা লাইন ধরে খাবার নিতে হয়েছে। আমাদের ব্যবহৃত জিনিস তারা না বলেই ব্যবহার শুরু করেছে।’
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।