কবি নজরুল মানবতার কবি: ঢাবি উপাচার্য
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন কবির পরিবার, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কবি নজরুল মানবতার কবি। তার নাটক, গান, গল্পে যে দর্শন পরিলক্ষিত হয় তা সকল স্থান, কাল, ও স্বাধীনতাকামী অসাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠীর জন্য বিবেচ্য।
রবিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ৭টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, নজরুলের গানের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে তবে শুধু দিবসকেন্দ্রিক শ্রদ্ধাঞ্জলি নয় সমাজ ও রাষ্ট্রে নজরুলের চেতনা প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। প্রেম, দ্রোহ সাম্য ও মানবতার কবি নজরুল অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিজের ভাবনাকে শানিত রেখেছেন আজীবন। বিশ্বব্যাপী চলমান হানাহানি, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান রুখতে নজরুলের চর্চা বাড়ানোর উদ্যোগ জরুরি বলেও মনে করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কবি নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে এনে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং 'জাতীয় কবি' হিসেবে ভূষিত করার ক্ষেত্রে জাতির পিতার রয়েছে এক অনবদ্য অবদান। কবি নজরুল মানবতার কবি। তার নাটক, গান, গল্পে যে দর্শন পরিলক্ষিত হয় তা সকল স্থান, কাল, ও স্বাধীনতাকামী অসাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠীর জন্য বিবেচ্য। কবি নজরুল ও বঙ্গবন্ধুর দর্শনে গভীর মিল রয়েছে। তারা উভয়ে শোষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন এবং প্রতিবাদ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন কাজী নজরুল ইসলামকে ভারতবর্ষের জাতীয় কবি করবেন। কিন্তু তিনি জাতীয়তাবাদ বিরোধী থাকায় বলেছিলেন আমি সকল যুগের, সকল মানুষের কবি। একপেশে বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে নজরুলকে ইসলামী তকমা দেওয়া হয়। কিন্তু নজরুল সাম্য ও মানবতার কবি। তিনি নারী ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে কালীপূজা করাসহ ইসলামী সঙ্গীত, শ্যামাসংগীত রচনা করেছেন। এসময় তিনি নজরুলের গান চর্চার প্রতি সবাইকে আহবান জানান।
কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাবির পক্ষ থেকে নজরুল সমাধি প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।