২৩ আগস্ট ২০২৩, ১৩:২০

সাংবিধানিক পন্থায় নির্বাচনকে ফলপ্রসু করতে সব রাজনৈতিক দলকে আহবান ঢাবি ভিসির

  © টিডিসি ছবি

সাংবিধানিক পন্থায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ফলপ্রসু করতে সব রাজনৈতিক দলকে আহবান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশকে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির অনুসরণে কি রকম পর্যুদস্ত হয় তা আমরা আগে দেখেছি। তাই সকল রাজনৈতিক দলকে আমরা আহবান জানাবো, তাদের সকলের উচিৎ সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় দেশের আসন্ন নির্বাচনকে ফলপ্রসু করা।

আজ বুধবার দুপুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস উপলক্ষে টিএসসিতে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান। ২০০৭ সালের ২০-২৩ আগস্ট তৎকালীন সেনা সমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার স্মরণে পরের বছর ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ১৯৭৫ সালে যেমন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা পরিকল্পনা করা হয়, সেভাবেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু তিনি বেঁচে যান। পরবর্তী ঘটনাগুলো তারই ধারাবাহিকতায় ঘটেছে।

এসময় তিনি তৎকালীন অবস্থার কথা স্মরণ করে বলেন, একটি ভয়ংকর পটভূমির ওপর এ ঘটনার জন্ম দিয়েছিলো। একদিকে দেশে স্বৈরাশাসন, অন্যদিকে সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের উত্থান সব মিলিয়ে আমাদের শিক্ষকদের জন্য কঠিন সময় পার করতে হয়েছিলো। এ ঘটনাটি  ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের ভয়াবহ সেই হত্যাকান্ডের ঘটনার ধারাবাহিকতায়ই ঘটে। তৎকালীন সময়ে আমাদের খুবই কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিলো। উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সাথে সবসময় গানম্যান থাকতো।

তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালের ২৩শে আগস্ট স্বৈরশাসকদের দ্বারা তখন সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রান্ত হয়েছিলো। যার মুল লক্ষ্য ছিলো দেশকে আবারও পাকিস্তানি অগণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া।

অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক  শিক্ষার্থী আন্দোলন রোধ করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা ক্যাম্প করতে দেওয়া ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রথম ভুল।

এসময় তিনি তৎকালীন শিক্ষক সমিতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তৎকালীন শিক্ষক সমিতি সেসময় প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা পালন করেছে। সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন গ্রেফতার হলেও শিক্ষক সমিতি কোনো আলোচনায়ও বসতে চায়নি। তৎকালীন শিক্ষক সমিতিতে যারা ছিলেন তারা সেনাবাহিনীদের সমর্থন করেছিলেন কি না এ ব্যাপারে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন 

সেসময় কারা নির্যাতিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত করে না তারা রাস্তায় নেমে পড়লো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, সেদিন পাকিস্তানের হানাদারদের মতো তারাও (স্বৈরাচারেরা) এসেছিলো ঢাবিতে আক্রমণ করতে। সেদিন ছাত্রদের সাথে আমরা তৎকালীন শিক্ষকরাও সমাবেত হয়েছিলাম। 

এসময় তিনি বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীরা কি পারবে সেসময়ের শিক্ষার্থীদের মত রুখে দাড়াতে? তিনি বলেন, এজন্য শিক্ষার্থীদেরকে ২৩শে আগস্টের কথা স্মরণ করতে হবে, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন স্মরণ করতে হবে, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে হবে।

এসময় তিনি বর্তমান শিক্ষক সমিতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা কি পারবেন সেদিনের মতো কালো দিবস এলে রুখে দাঁড়াতে?

সেদিনের এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও টিএসসিতে কর্মরত রফীকুল ইসলাম সুজন বলেন, ২০০৭ সালের ২৩শে আগস্টেরক ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য ছিলো বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা, তাকে ক্ষমতা থেকে মাইনাস করা। কিন্তু আমরা সেদিন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে ছিলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.  মমতাজউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।