ঢাবির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে?
আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবস্থারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ২০১৪ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘University of Dhaka’ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একটি অফিশিয়াল পেজ খোলা হয়েছিল। এরপর সেটি ভেরিফাইডও (পেজের পাশে নীল রঙের টিক চিহ্ন) করা হয়েছে। পেজটিতে বর্তমানে এক মিলিয়ন (১০ লাখ) করে লাইক ও ফলোয়ার রয়েছে। তবে সেই পেজটি এখন পুরোপুরিভাবে নিষ্ক্রিয়।
পেজে সর্বশেষ পোস্টটি ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে দেয়া হয়েছিল। পেজটি না চালানোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্যে নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তাদের বক্তব্যে, শিগগির ভেরিফায়েড পেজটি সক্রিয় করা ব্যাপারে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি, বর্তমানে পেজটিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেই। পেজটি ভেরিফাইড, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ না থাকাটা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের চরম অপেশাদারিত্বের পরিচয় দেয় বলে মনে করছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের এই দাবিটি যুক্তিসঙ্গত। পেজটির ‘Page transparency’ অপশনের ‘People who manage this Page’-এ গিয়ে পাওয়া যায় এর সত্যতা। সেখানে দেখা যায়, পেজটি পরিচালনা করা হচ্ছে দুটি দেশ-বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন। তথ্যপ্রযুক্তি ও সাইবার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্তমানে পেজটি হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফিলিপাইন কিংবা তাইওয়ান এরকম দেশ থেকে পেজটি পরিচালনা করা মানেই সেটি হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জানা যায়, একসময় ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একটি অনেকগুলো পেজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ওসব পেজে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেওয়া হতো। এসব পেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত হিসেবেও নিজেদের অনেক বক্তব্য চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সামাজিক মাধ্যম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সব ধরনের অবৈধ পেজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। পরে ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নিজ দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে এই ফেসবুক পেজের উদ্বোধন করেন।
পেজটির দেখাশোনার দায়িত্ব রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর চালু হওয়া এই পেজটি ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ভেরিফাই করে। এরপর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কমবেশি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা হয়েছে। তারপর ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট মাত্র একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত "ঢাবি ৫২তম সমাবর্তনের নিবন্ধনের সময়সীমা বৃদ্ধি" শীর্ষক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এরপর সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর “শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা" শীর্ষক একটি বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করা হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ বছরে মাত্র তিনটি এবং সর্বশেষ দুই বছরে পেজটিতে কোন পোস্ট দেখা যায়নি।
শাহরিয়ার হাসান নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহের মধ্যে ফেসবুক সর্বাধিক সময় ব্যবহার করে থাকে। আর সেখানে কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেরিফাইড পেজে কোনো আপডেট নেই যা খুবই হতাশার। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে যদি প্রশাসন পেজটি পুনরায় সচলের উদ্যোগ নেয় তাহলে তথ্য সংক্রান্ত ভোগান্তি লাঘব হবে।
শাকিল জামান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ভেরিফাইড পেজটি নিয়ন্ত্রণ না থাকাটা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের চরম অপেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে কেউ এটা আশা করে না।
সাইবার বিশেষজ্ঞ ও ডিকোডস ল্যাব লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ মঈনুদ্দীন বলেন, পাকিস্তান-ভিয়েতনাম এরকম দেশ থেকে পেজটি পরিচালনা করা মানেই সেটি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে। দেশে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। সেজন্য ওই পেজটি বর্তমানে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। যেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার করছে না।
কিভাবে পেজটি উদ্ধার করা যায়, এ প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বের করতে হবে এ পেজটির এডমিন কারা ছিল এবং বর্তমানে কারা রয়েছে। প্রমাণ সাপেক্ষে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি যোগাযোগ করে তাহলে পেজটি উদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসিফ হোসেন খান বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি পেজটিকে সক্রিয় করার জন্য। এই মাসের মধ্যেই আমরা পেজটিকে আবার চালু করবো বলে আশাবাদী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। পেজটি সম্পর্কে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে আইসিটি সেলকে জানিয়েছি। তারা প্রতিবেদন তৈরি করলে সে অনুযায়ী পেজটি চালুর সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।