‘স্টেপ ডাউন হাসিনা’ লিখে চবি শিক্ষকের পোস্ট, শাস্তি চায় সমিতি
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পোস্ট দেওয়ায় এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি।
গত ৩০ জুলাই ফেসবুকে #Stepdownhasina লিখে পোস্ট করেন চবি সমাজতত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাইদুল ইসলাম। যা এখনো ফেসবুকে দৃশ্যমান।
রবিবার (২০ আগস্ট) চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় এক সিদ্ধান্তে মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে উপাচার্যকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মাইদুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর নামে বিভিন্ন কুৎসা রটনাসহ আপত্তিকর পোস্ট প্রদান করেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক হিসেবে চরম অসদাচরণের শামিল। এ কারণে ২০২১ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয় হতে মাইদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত আইন, ২০০৯) অনুসারে দায়েরকৃত একটি মামলার সর্বশেষ অবস্থা অবহিত করার অনুরোধ সহকারে উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর পত্র প্রদান করা হয়। এর প্রেক্ষিতে পাচার্যের পক্ষ থেকে সালামত উল্যা ভূঁইয়া কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানার জন্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃংখলা সংবিধি অনুযায়ী মাইদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর জোর দাবি জানানোর জন্য অদ্যকার সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক বলেন, ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় এক্টে সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের গঠনমূলক সমালোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি মাইদুল ইসলাম তার ফেইসবুক পোস্টে স্টেপ ডাউন হাসিনা লিখে সরকার পতনের জন্য জনগণকে সরাসরি উৎসাহিত করেছেন। সরকারের প্রধান যিনি থাকেন তিনি আমার মতের হতে পারেন অথবা নাও হতে পারেন। তাকে পতনের জন্য প্রকাশ্যে দেশবাসীকে আহবান জানানোর কোন সুযোগ নেই। আমরা দেখেছি যে তিনি পোস্ট করেছেন আমাদের কাছে এর প্রমাণ আছে। এজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য বরাবর আহবান জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে তিনি এমন পোস্ট দিতে পারেন না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাইদুল ইসলাম বলেন গণ-মানুষের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। তাই, এই প্রতিষ্ঠান যে কোন সরকারের কিংবা একক কোন গোষ্ঠীর অথবা কারো বাপ-দাদার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। এই প্রতিষ্ঠান তাই সরকারী কোন দলের খোঁয়াড় নয়। এটি এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট যে দেশে আইনের ন্যায্য শাসন নেই, জবাবদিহিতা নেই, জনগণের ভোটাধিকার নেই, গণতন্ত্রও সেখানে অনুপস্থিত।
তিনি আরো বলেন, ভোটাধিকার এবং গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবী জানিয়ে #StepDownHasina আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছি। অনলাইন বা অফলাইন নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারা আমার নাগরিক, রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক অধিকার।
"একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি মত প্রকাশের অধিকারের প্রাথমিক ধারণা রাখে না বা রাখতে চায় না এটা অত্যন্ত দু:খজনক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বোধোদয় হোক। শিক্ষক সমিতিগুলোর বোধোদয় হোক।"
উল্লেখ্য, এর আগেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখার উদ্দিন আয়াজ। ওই মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। গ্রেফতারের পর তাকে বিশ্ববদ্যিালয় থেকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।