৩ দফা দাবিতে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কুয়েত-মৈত্রীর ছাত্রীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে আবাসন সংকট নিরসনে ৩০০ শিক্ষার্থীকে অন্য হলে স্থানান্তরসহ তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন হলের শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (১৪ আগস্ট) দুপুর একটা থেকে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। এসময় হলের আবাসিক শিক্ষক মনিরা পারভীন ও সহকারী প্রক্টর সঞ্চিতা গুহ এসে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে তাদের আন্দোলনের সমাপ্তি টানতে বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি না আদায় হলে অবস্থান ছাড়বেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে বেলা তিনটার কিছু আগে তিনজনের একটি প্রতিনিধিদল হলের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে যান। বাকিরা রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
দাবি আদায়ে আজ সোমবার বেলা একটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন কুয়েত মৈত্রী হলের একদল ছাত্রী৷ এসময় শিক্ষার্থীরা তিনটি দাবি নিয়ে অবস্থান নেন। তাঁদের দাবিগুলো হলো,
১. বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল থেকে অন্তত ৩০০ জন শিক্ষার্থীকে অন্য হলে এক মাসের মধ্যে স্থানান্তরের মাধ্যমে বৈধ আসন নিশ্চিত করা।
২. পরবর্তীতে হলের আসনসংখ্যার সঙ্গে সমন্বয় রেখে নতুন শিক্ষার্থী অ্যালটমেন্ট দেওয়া।
৩. হলের সার্বিক সংকট বিবেচনায় মূল ভবনের প্রতি কক্ষে ৬ জনের বেশি শিক্ষার্থী বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করা৷
এসময় শিক্ষার্থীরা-মানি না মানবো না, সিট ছাড়া যাবো না; মৈত্রী হলে কি নাই, সিট নাই সিট নাই; হই হই রই রই, প্রশাসন ঘুমে রয়; আমার বোন ঘুমাবে কোথায়, প্রশাসন জবাব চাই- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
আরও পড়ুন: ফাঁস হওয়া প্রশ্নে দেড় হাজার ডাক্তার
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের হলে আবাসন সমস্যা, বাসের সংকট, খাবার মান খারাপ, ওয়াশরুম কমসহ অনেক সমস্যা রয়েছে, কিন্তু আমরা সেগুলো সামনে আনছি না। শুধু আমরা চাই ৩০০ শিক্ষার্থীকে অন্যান্য হলে স্থানান্তরিত করা হোক। প্রতি বছর প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থীকে হলে আসন দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচশত আসন রয়েছে। ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী যারা কি-না এখন চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন তারাও তাদের বৈধ সিট পাচ্ছেন না বাধ্য হয়ে এক রুমে অনেক শিক্ষার্থী থাকায় সেটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থী হলের আসন সংখ্যা উল্লেখ করে বলেন, কুয়েত মৈত্রী হলে মূল ভবনে বৈধ আসনের কক্ষের সংখ্যা ৮৯টি৷ ৫৭টি কক্ষে বর্তমানে সাতজন করে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে৷ বাকি ৩১টি কক্ষে ছয়জন করে শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন৷ সে ক্ষেত্রে সব কক্ষে সাতজন শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও অতিথিকক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৩১ জন শিক্ষার্থীকে মূল ভবনে বৈধ আসন দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ এই পদক্ষেপে প্রকৃতপক্ষে আসনসংকটের সমাধান হচ্ছে না৷ একই সঙ্গে মূল ভবনে এক কক্ষে সাতজন করে শিক্ষার্থী বরাদ্দ দেওয়ায় সেখানে বসবাসের অযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷
ভিসি স্যারের মতামত সম্পর্কে তারা বলেন, সাংবাদিক সম্মেলন পরবর্তীতে আমরা ভিসি স্যারের কাছে স্মারকলিপি দিলে তিনি হল পরিদর্শন করে আসেন। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করলেও ছাত্রীদের স্থানান্তর নিয়ে কথা না বলে এড়িয়ে যান।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের যৌক্তিক চাওয়া নিয়ে প্রভোস্ট ম্যাম সহ প্রশাসনকে জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের নিয়ে কোন চিন্তা হয়তো তাদের নেই বলে আজকে আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে। আমাদের সবার আর্থিক অবস্থা ভালো না, এমনকি আমাদের অধিকাংশের ঢাকায় পরিচিত আত্মীয়ের বাসাও নেই যে আমরা সেখানে গিয়ে থাকবো। তাই আমাদের বাধ্য হয়েই হলে থাকতে হচ্ছে। অন্য হলের মেয়েরা যেখানে প্রথম ছয় মাসেই সিট পেয়ে যাচ্ছে ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থী চতুর্থ বর্ষে চলে আসলেও সিট পাচ্ছে না। প্রশাসনকে অসংখ্যবার এসব বলা হলেও তারা শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। এতগুলো শিক্ষার্থী কিভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করছে সেদিকে তাদের নজর নেই।
এসময় মৈত্রী হলের হাউজ টিউটর মনিরা পারভীন বলেন, অনেক শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসে ফলে তাদের বাইরে থাকার জায়গা না থাকায় গণরুমেই থেকে যায়। আমরাও জানি সেখানে থাকা সম্ভব না কিন্তু আমাদের বাধ্য হয়ে সেটা মেনে নিতে হয়। আমরা পারছি না তাদের সিট দিতে। আমরা প্রতি রুমে ৬ জনের জায়গায় ৭ জন করে দিয়েছি তবুও জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। আমরাও প্রশাসনকে জানিয়েছি যেনো নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। আর সেটা না হলে যেন অ্যালটমেট কম দেওয়া হয়।