২ বছর পর জানা গেল খুনে জড়িত ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা
২ বছর আগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক যুবককে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শেখ মারুফ হোসেন সুজন। ২০২১ সালে দায়ের করা এক মামলায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বুধবার (৮ আগস্ট) একটি মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে সুজনকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেপ্তার শেখ মারুফ হোসেন ওরফে সুজন (২৬) বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এর আগে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি।
এ ঘটনায় নিহত আবুল হাসান রাজধানীর ইস্টার্ন মল্লিকার একটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদরে। তিনি পরিবারের সঙ্গে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের একটি বাসায় থাকতেন।
২০২১ সালের ১ জুনে এক যুবককে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চলে যান তিন যুবক। ভর্তির দিনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল হাসান নামের ওই যুবকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে আবুল হাসানের বাবা আব্দুল মতিন। প্রথমে পুলিশ এটাকে স্বাভাবিক মৃত্যু ভাবলেও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশের হাতে আসলে তারা জানতে পারেন এটা হত্যা ছিলো।
আবুল হাসান মাদকাসক্ত ছিলেন যার ফলে তার নিয়মিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাতায়াত ছিলো। হত্যার কিছুদিন পূর্বে নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে ঘটনার দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আবুল হাসানের ওপর হামলা করেন মারুফ ও তার ওই দুই বন্ধু। এদের মধ্যে মারুফ ও তরিকুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আবুল হাসানকে আহত অবস্থায় ওই তিনজনই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গিয়েছিলেন।
পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তরিকুল প্রথম আবুল হাসানকে সজোরে লাথি মারেন। এরপর তিনজনই তাঁকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এর মধ্যে তরিকুলের এক লাথিতে আবুল হাসান কংক্রিটের ঢালাইয়ের ওপর পড়ে যান। তখন তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার মাথার পেছনে আঘাত লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেদিনই আবুল হাসানের মৃত্যু হয়।
শাহবাগ থানার তদন্ত কর্মকর্তা (এস আই) অমল কৃষ্ণ দে বলেন, আবুল হাসানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সময় তারা ভুয়া নাম ও ৬ বছরে আগে ব্যবহৃত হওয়া মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে। পরবর্তীতে পুলিশ মেডিকেলের রোগী ভর্তির খাতা থেকে সেই অব্যবহৃত নাম্বারটি পায়। পরে জানতে পারি সেই নাম্বারটি পটুয়াখালীর জামাল হোসেনের নামে নিবন্ধিত। আবুল হাসান খুনে জড়িত সন্দেহে জামাল হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তার ভাই তরিকুলের নাম জানতে পারি। পরে সেই সূত্র ধরে আমরা তার মুঠোফোনের তথ্য যাচাই করে পুলিশ মারুফ হোসেন সুজনের সংশ্লিষ্টটা পাই। পরে বিভিন্ন অনুসন্ধান শেষ গত বুধবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় মারুফ হত্যায় সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে ৬৪ ধারায় জবানবন্দীও দেয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি করি তারা কখনো মাদকাসক্ত বা বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেই না। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির সাথে জড়িত নয় বরং সে কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমান বলেন, এমন কোনো তথ্য এখনও আমরা পাইনি। তিনি যদি খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হন, স্বীকারোক্তি দেন তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি আমি শুনিনি বা পুলিশের পক্ষ থেকেও আমাকে অবহিত করা হয়নি। যদি সে অপরাধী হয়ে থাকে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে। তাছাড়া আমরাও তো একটা প্রসেসের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করে থাকি সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।