দুই নেতার মার খেয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন রাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা
নিরাপত্তাহীনতার কারণে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন নিজ সংগঠনের দুই নেতার মারধরের শিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায়।
এ বিষয়ে দুপুরে নজরুল বলেন, ঘটনার পর ক্যাম্পাসে আমি অভিযুক্তদের ভয়ে চলাফেরা করতে পারছি না। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার আবেদন করার পরেও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় আমি হল ত্যাগ করেছি।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমি ক্যাম্পাসে ফিরব না। একই সঙ্গে শিক্ষাজীবনেরও এখানেই ইতি টানবো। আর যখন ক্যাম্পাসে ফিরবো তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ সংগঠনের দুই নেতার মারধরে কান ফেটে রক্ত বের হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নজরুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের অতিথিকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগকারী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শের-ই-বাংলা হল ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক। তবে বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তিনি।
অপরদিকে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস ও সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক উপসম্পাদক আল আমিন।
কান ফাটিয়ে দিয়েছেন দুই নেতা, প্রক্টরের কাছে অভিযোগ রাবি ছাত্রলীগ নেতারকান ফাটিয়ে দিয়েছেন দুই নেতা, প্রক্টরের কাছে অভিযোগ রাবি ছাত্রলীগ নেতার
অভিযোগপত্র ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে শের-ই বাংলা হলের রিডিং রুমে পড়তে ছিলেন নজরুল। কিন্তু পাশেই উচ্চ স্বরে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন সৈয়দ আমীর আলী হল ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক আল-আমিন। নজরুল তাকে জোরে কথা বলতে নিষেধ করায় আল আমিন তার ওপর চড়াও হন। দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়।
এরপর আল আমিন বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমসকে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর দুজনে মিলে নজরুলকে শের-ই-বাংলা হলের বাথরুমে নিয়ে গিয়ে গেস্টরুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। মারধরের একপর্যায়ে নজরুল মাটিতে পড়ে যায় এবং তার কান দিয়ে রক্ত বের হয়। এ বিষয়ে কোথাও অভিযোগ জানালে অথবা কাউকে বললে তাকে আবার মারা হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যান অভিযুক্তরা।
ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য হলের দুইজন আবাসিক শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছে হল প্রশাসন। দুই আবাসিক শিক্ষক হলেন ড. শাহ মুখতার আহমেদ ও ড. আশরাফুল ইসলাম। আজ শুক্রবার অফিশিয়াল ছুটি থাকায় তারা আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে শের-ই বাংলা হল প্রাধ্যক্ষ ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ঘটনার পরদিন আমি দুই পক্ষকেই ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু সে সময় নজরুল আমাকে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জানায়নি। তবে হল প্রাধ্যক্ষ হিসেবে তার নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করবো।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি তদন্তের জন্য দুইজন আবাসিক শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অফিশিয়ালি এখনো দায়িত্ব না পেলেও তারা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। একজন আবাসিক শিক্ষক ভুক্তভোগী নজরুলের সঙ্গে কথাও বলেছেন। আশা করছি তদন্তের মাধ্যমে মূল ঘটনা উঠে আসবে।