অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে: রাবির সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য বিদায়ী ছাত্র উপদেষ্টা এম. তারেক নূরের বিরুদ্ধে প্রায় ১৪ লাখ টাকার নয়ছয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ২৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে প্রশাসনের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন তারেক নূর। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে কথা বলার কারণেই তাকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এই ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো অনুষ্ঠান করার পরে মোট খরচ হিসেব করে অফিসে জমা দেওয়াকে সমন্বয় বলে। সমন্বয়ের বিষয়টা সাধারণত অফিস পালন করে, ফাইল মেইনটেইন করার দায়িত্ব আমার না। অনেক সময় অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ হয়ে যায়। গত ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ হয়েছিল। সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন না দেওয়ায় সমন্বয় করা যায়নি। এরকম ঘটনা অনেক রয়েছে।
কেন সমন্বয় করা হয়নি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেকোনো অনুষ্ঠান একটা কমিটির মাধ্যমে হয়। যেটার সভাপতি থাকেন একজন উপ-উপাচার্য এবং সদস্য সচিব থাকেন ছাত্র উপদেষ্টা। এছাড়া, কমিটির সদস্য থাকেন বেশ কয়েকজন। এখানে দায়ের কথা বলতে গেলে, দায়তো পুরো কমিটির ওপর বর্তাবে। শুধু ছাত্র উপদেষ্টার একার দায় হবে কেন?
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা অফিসে আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখবেন, সমন্বয়টা ধীরে ধীরে হয়। কারণ আমাদের এতটা ব্যস্ত থাকতে হয় যে, এটা করার সময় বের করা কঠিন হয়ে যায়। সাধারণত একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সমন্বয় না করলে, তার অবসরের সময় টাকাটা কেটে নেওয়া হয়। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখবেন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একজন চেয়ারম্যান দশ বছর আগের বিল কিছুদিন আগে সমন্বয় করেছে।
তিনি বলেন, উপাচার্য মহোদয় যে কাজ ও সাহায্যগুলো আমাকে করতে বলেছিলেন, সেগুলো কি আমি নিজের পকেট থেকে দেব? এগুলো করা হচ্ছে এর পেছনে আসল কারণ, আমি যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলছি বা বলবো সেগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সংস্কার কাজে ৭-৮ কোটি টাকার অনিয়ম, কয়েকটি দোকান করতেই ১ কোটি টাকা খরচ, কৃষি প্রকল্পের ২ কোটি টাকা লোপাট এসব বিষয় নিয়ে কথা বলাতেই প্রশাসনের একটি অংশ আমার পিছনে লেগেছে বলে দাবি করেন তিনি।
রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে বিল সমন্বয় করার চিঠি পাওয়ার দুইমাস হয়ে গেলেও সাড়া না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমন্বয় করার দায়িত্ব আমার। বকেয়ার বিষয়টাতো আমাকে বলতে হবে। কী কী করেছে সেটার সুনির্দিষ্ট লিস্টসহ কতটাকা বাকি আছে সে বিষয়ে আমার কাছে আসতে হবে পাওনাদারদের। কাজটা একটা কমিটির মাধ্যমে হয়। কোনো বাকি থেকে থাকলে, তা পরিশোধের দায়িত্ব ওই কমিটির।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে রেজিস্ট্রার দপ্তরের পাঠানো এক চিঠিতে এম. তারেক নুরকে দ্রুত পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ছাত্র উপদেষ্টা থাকাবস্থায় বিভিন্ন কাজে ৬৭ দফায় অগ্রিম ১৯ লক্ষ ৯৮ হাজার ১৫০ টাকা গ্রহণ করেছে এম তারেক নুর। কিন্তু মাত্র ৬ লক্ষ ১৬ হাজার ১৮৫ টাকার সমন্বয় করেছেন। বাকি ১৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৯৭০ টাকা সমন্বয় করেন নি। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই টাকার সমন্বয় করা কথা বলা হয়েছে। প্রশাসনের এমন চিঠির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।