রাবি অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসি কার্যকরে নেই বাধা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করতে কোনও বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন।

সোমবার (১৭ জুলাই) রিটের পক্ষে শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি আলী রেজা রুকুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেয়া হয়। রায়ে আদালত বলেছেন, ‘আপিল বিভাগ আসামিদের রিভিউ খারিজ করে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে রিট শোনার সুযোগ নেই।’

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এন গোস্বামী আদালতে রিটের পক্ষে এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন।

আরও পড়ুনঃ ১১৩ কোটি টাকার অনিয়ম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে

এর আগে নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের সদস্যরা ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে রিট দায়ের করেন। গত ৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাওয়া দুই আসামির পক্ষে তাদের ভাই ও স্ত্রী ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

রিট আবেদনে বলা হয়, এ মামলায় আসামিদের আটক, গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ব্যত্যয় হয়েছে। তাই এক আসামির ভাই ও আরেক আসামির স্ত্রী পৃথক রিট আবেদন করেছেন। 

গত ২ মে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির আবেদন খারিজের রায় প্রকাশিত হয়। ফলে আইন অনুসারে রায়টি বিচারিক আদালত হয়ে কারাগারে যাবে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারবেন।

রিভিউ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, সে আবেদন খারিজ করা হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয় জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ এই মামলাযর  চার্জশিট দেয়।  

এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে চার জনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত। দণ্ডিতরা হলো- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসারের কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালাম।

খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) আসলে আসামিরা আপিল করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল এই মামলার দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।  

দুই আসামি একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। অন্য দুই আসামি মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালামের ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করলে একই সাথে রাষ্ট্রপক্ষ যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে আসামিরা রিভিউ আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রিভিউর ওপর শুনানি শুরু হয়।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আসামিদের স্বীকারোক্তিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার এ ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধুমাত্র প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল, ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভাব না।  

আমাদের এও বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আব্দুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। 

গত ২ মার্চ আপিল বিভাগ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আসামিদের করা আবেদনের খারিজ করে দেন। 

একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসির দণ্ডাদেশ এবং মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালামের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রাখা হয়।  এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।

অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে বলে বঙ্গভবন সূত্র জানিয়েছে।