১৩ জুলাই ২০২৩, ১৪:৪৯

বিতর্কিত প্রার্থীকে সুপারিশ, ‘সিন্ডিকেট এজেন্ডা নিয়ে চবি প্রশাসনের গড়িমসি’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

আগামীকাল শুক্রাবর (১৪ জুলাই) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৪ তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৭ দিন আগে সদস্যদের কাছে সভার এজেন্ডা পৌঁছে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আগামীকালের সিন্ডিকেট এজেন্ডা সদস্যদের কাছে কয়েক দফায় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য। যা নিয়ম পরিপন্থী। এছাড়াও বিভিন্ন অজুহাতে এই সভার সময়সূচি দুই ধাপে পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন বিতর্কিত নিয়োগ এ সিন্ডিকেটে পাশ করানোর জন্য পায়তারা করছে বলে জানা গেছে।

সদস্যদের আলোচ্যসূচী প্রদানে প্রশাসনের গড়িমসি নিয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সিন্ডিকেটের এজেন্ডা সাতদিন পূর্বে দিতে হবে। কিন্তু এবারের সিন্ডিকেটের এজেন্ডা নিয়ে প্রশাসন গড়িমসি করেছে। কয়েকদফায় এজেন্ডা দেওয়া হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের পরিপন্থী অনেক কাজই চলছে। এটাও তার মধ্যে একটা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপাচার্যের পরিবর্তনের আশংকা রয়েছে। তাই, অসম্পূর্ণ নিয়োগগুলো এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে প্রশাসনপন্থিরা। ফলে এজেন্ডা নিয়ে গড়িমসিসহ নানান অভিযোগ উঠেছে এরই মধ্যে।

আরও পড়ুন: নতুন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য পেল পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়

এদিকে পালি বিভাগের বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত দুই প্রার্থীসহ মোট চারজনকে সুপারিশ করেছে নিয়োগ বোর্ড। এছাড়াও অধিকতর যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও নিয়মবহির্ভূতভাবে পছন্দের ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, পালি বিভাগের শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য একজন স্থায়ী ও একজন অস্থায়ী পদে মোট দুজন প্রভাষক নিয়োগের কথা ছিল। তবে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে অতিরিক্ত আরও দুজনকে সুপারিশ করেছে বোর্ড। যা ইউজিসির নির্দেশনা ও বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থি। এ কারণে গত ৮ এপ্রিল অন্যায়ভাবে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ তুলে চবি উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে প্রার্থী সজীব সিংহ ও বোধি মিত্র শ্রামনের পক্ষে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট ও চট্টগ্রাম জজকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ রাসেল। 

এছাড়াও এই নিয়োগ বোর্ডে (১৩ মার্চ) অভি বড়ুয়া নামে এক প্রার্থীকে পালি বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য ভাইভা বোর্ডে সর্বোচ্চ সুপারিশ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখ্তার। এসময় বিভাগীয় সভাপতির নোট অব ডিসেন্ট (দ্বিমত পোষণ) ও পরিকল্পনা কমিটির মতামত আমলে নেওয়া হয়নি। অভি বড়ুয়া নামের এই প্রার্থী ২০০৩ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করলেও গত ২০ বছরে তার কোনো চাকরির অভিজ্ঞতা, উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা প্রকাশনা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আবেদনের শর্তাবলি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন অভি বডুয়া। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শতকরা হিসেবে প্রাপ্ত নম্বর উল্লেখ করার শর্ত থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ আবেদনে তিনি তা উল্লেখ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয় বিধি অনুসারে, অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ দরখাস্ত সরাসরি বাতিলযোগ্য।

বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি থেকে বাদ পড়েছিলেন এবং  ভাইভা পরীক্ষায় যথাযথ প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হননি। মূলত অভি বড়ুয়া হচ্ছেন উপাচার্যের আস্থাভাজন সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী। তাই অধিকতর যোগ্য প্রার্থী থাকলেও স্বজনপ্রীতি করে অভি বড়ুয়াকে নিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ সুপারিশ করেন উপাচার্য। প্রক্টর পত্নীর এ নিয়োগ নিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

এ বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমার মক্কেলরা চবির পালি বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে যোগ্যতার শর্তাবলি পূরণ করে মৌখিক পরীক্ষায়ও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তা সত্ত্বেও অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার অপচেষ্টা বিধায় আমার মক্কেলরা লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে উল্লিখিত নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে যথাযথ প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিনীত আবেদন জানাচ্ছে। অন্যথায় আমার মক্কেলরা যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থী যদি আবেদনপত্রে অসত্য তথ্য দেন বা তথ্য গোপন করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। বরং নিয়োগ পেয়ে গেলেও তাকে বরখাস্ত করার নিয়ম আছে।

আরও পড়ুন: নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতিবন্ধীরা পাবেন বাড়তি সময়

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রথমত, অধিকতর কম যোগ্য প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মানুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। দ্বিতীয়ত, কেউ যদি অসত্য তথ্য দেয় এবং অনিয়মের আশ্রয় নেয়, এটা ফৌজদারি অপরাধ।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ জানুয়ারি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে পালি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের বিপরীতে একটি স্থায়ী প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। তারই আলোকে ওই পদের জন্য ৩৮ প্রার্থী আবেদন করেন।

এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে একই বছর ২৪ আগস্ট সহযোগী অধ্যাপকের বিপরীতে একটি অস্থায়ী পদে প্রভাষক নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন করে আরেকটি বিজ্ঞাপন প্রকাশন করে। বিজ্ঞাপনের আলোকে ২৭ জন ওই পদের জন্য আবেদন করেন। নিয়মানুযায়ী স্থায়ী ও অস্থায়ী পদে দুজন প্রভাষক নিয়োগের কথা থাকলেও বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত আরও দুই প্রার্থীকে সুপারিশ করে নিয়োগ বোর্ড, যা ইউজিসির নির্দেশনা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন বিভাগের সভাপতি শাসনানন্দ বড়ুয়া। 

চবি হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয় স্পিরিটের সম্পূর্ণ বিরোধী। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, সংবাদ মাধ্যমের বরাতে আমরা যতটুকু জেনেছি, তাতে এ রকম অযোগ্য প্রার্থীকে বিধিবহির্ভূত নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আশা করছি, বিজ্ঞ সিন্ডিকেট স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন।