মেয়াদোত্তীর্ণদের নিয়েই বসছে জাবির সিনেট, থাকছে না ছাত্র প্রতিনিধি
মেয়াদোত্তীর্ণ সিনেট সদস্য ও কোনো ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৪০তম সিনেট অধিবেশন। শনিবার (২৪ জুন) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত হবে সিনেট অধিবেশন। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, ১৯৭৩ এর ১৯(১) ধারা অনুসারে ৯৩ জন মনোনীত ও নির্বাচিত সদস্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট গঠিত হয়। তবে অ্যাক্টের ১৯ (১)-এর ‘জে’ ধারা অনুসারে শিক্ষক প্রতিনিধিদের নির্বাচিত ৩৩ জনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৮ সালের অক্টোবরে। অ্যাক্টের ১৯(১)-এর ‘আই’ ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ২৫ জনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে।
অ্যাক্টের ১৯ (১)-এর ‘ই’ ধারা অনুযায়ী আচার্য কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন শিক্ষাবিদের মেয়াদও শেষ হয়েছে। সিনেটের মোট ৯৩ জন সদস্যের মধ্যে চারজন রয়েছেন পদাধিকার বলে বলে। নিয়ম অনুযায়ী, সিনেটের ৬৩টি সদস্যপদে নতুন করে মনোনয়ন ও নির্বাচনের প্রয়োজন রয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টে বর্ণিত ১৯(২) ধারায় উল্লেখ করা আছে, ‘সিনেট সদস্যদের দায়িত্ব ততক্ষণ পর্যন্ত বহাল থাকবে, যতক্ষণ না তাদের উত্তরাধিকার নির্বাচিত, মনোনীত বা নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়।’ সে অনুযায়ী উক্ত সদস্যদের মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তাঁদের পদ শূন্য হচ্ছে না। তবে, দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় আসন্ন সিনেটের নৈতিক বৈধতা নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের।
এ বিষয়ে সিনেট সদস্য সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল আলম সেলিম বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও পরবর্তী উত্তরাধিকার না আসা পর্যন্ত সিনেটররা দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবে। তবে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় সিনেটে অংশগ্রহণ নৈতিক বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেহেতু উপাচার্য আশ্বাস দিয়েছেন, খুব দ্রুতই সিনেটসহ সব পর্ষদের নির্বাচন হবে বলে আশা করি।
এদিকে অ্যাক্টের ১৯(১)-এর ‘কে’ ধারা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধিদের পাঁচটি পদ বিগত ৩ দশক ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে নির্ধারিত পাঁচ জন ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই বসছে আসন্ন সিনেট অধিবেশন। এতে ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া সিনেটকে ‘অপূর্ণাঙ্গ’ আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনেরা।
তাছাড়া শিক্ষার্থীদের স্বার্থে অতি দ্রুত জাকসু নির্বাচন দিয়ে ছাত্র প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সিনেট অধিবেশন আহ্বানের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন না হওয়ায় সিনেটে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি নেই। ফলে আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে কথা বলতে পারছি না। ছাত্রপ্রতিনিধি ছাড়া সিনেট অধিবেশন কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রশাসনের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নেই ৩০ বছর ধরে। অর্থাৎ ৩০ বছর এ প্রশাসন ছাত্রদের কোনো কথা শোনে না। এটি একটি স্বৈরাচারী মনোভাব। এতে ছাত্ররা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এবং সিনেটের আলোচনা প্রশাসনের পক্ষে চলে যায়। এটা শুধু শিক্ষকদের অধিকার রক্ষার একটি সভা। জাকসু নির্বাচন না দিয়ে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত করছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ পর্ষদের নির্বাচন ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম জাতীয় নির্বাচনের পরে জাকসুসহ সকল মেয়াদোত্তীর্ণ পর্ষদের নির্বাচন দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, ‘সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি রাখার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিক। ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকায় আমাদের পক্ষে এখনই কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যেহেতু আমি কথা দিয়েছি, জাতীয় নির্বাচন শেষে সুযোগ বুঝে জাকসু নির্বাচন দেব।’