ঈদে হল খোলা থাকছে না ঢাকার বাইরের অধিকাংশ ক্যাম্পাসে
রাজধানী ঢাকার বাইরের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় বন্ধ থাকবে। তবে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ঈদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ক্যাম্পাসের হল সমূহ খোলা থাকছে। এর মধ্যে ছাত্র হলসমূহ খোলা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে তিন ছাত্রী হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি)।
পবিত্র ঈদ-উল-আজহা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় উৎসব। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা না করে এই ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিউশনিতেও ছুটি না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় হলের অধিকাংশ আবাসিক শিক্ষার্থীর। এতে টিউশন করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ছেলে-মেয়েদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়ে টিউশনি চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের ছুটির সঙ্গে সংস্কারের নাম করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হলসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হল খোলা রাখার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তোয়ক্কা না করে হল বন্ধ করে দেয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি) প্রসাশন।
শিক্ষার্থীদের হল খোলা রাখার আন্দোলনকে অযৌক্তক দাবি উল্লেখ করে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, হল বন্ধের ব্যাপারটা বছরের শুরুতে দেওয়া একাডেমিক ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী পূর্ব নির্ধারিত। উপাচার্য চাইলেও নিয়ম বহির্ভূত হয়ে হল খোলা রাখার সুযোগ নেই।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় , কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শেষেরদিকে স্থাপিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্যবারের মত এবারও ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে হল সমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এক যুগ বা তার বেশি সময় পার হওয়া দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থাপিত বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখনো হল খোলা রাখার সংস্কৃতি তৈরি হয়ে উঠেনি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের বিভিন্ন ছুটিতে হলসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। জানা যায়, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরাসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বড় অংশ ঢাকামুখী হওয়ায় ছুটিসমূহে হল বন্ধ রাখা হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ চাকরির প্রস্তুতি নেন। এসব শিক্ষার্থীরা ছুটিতে ক্যাম্পাসেই থেকে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ বন্ধ না হওয়ায় প্রতিবছরই শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হলে থেকে যান। জানা যায়, ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ চলে গেলেও প্রতিটি হলেই গড়ে শ’খানেক শিক্ষার্থী থেকে গেছেন। তাদের সবার উদ্দেশ্য আসন্ন বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন।
আরো পড়ুন: এশিয়ার সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই একটিও, ১৮৬ হয়ে দেশসেরা ঢাবি
এছাড়াও রয়েছে আরও শত ব্যস্ততা। ক্যারিয়ার ভাবনাতেই মূলত তাদের ঈদ কাটবে হলে। পরিবারকে ছেড়ে ঈদের দিন কাটানো বেশ বেদনার। তবু তারা জানালেন, এবার ‘স্যাক্রিফাইস’ করেছেন ঈদ আনন্দ। হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাবিল হাসান বাড়ি যাননি কোচিংয়ের ভর্তি পরীক্ষার্থী শিক্ষার্থীদের সময় দিতে। ঢাবিতে ভর্তিচ্ছুদের নিয়ে একটি ব্যাচ শুরু করেছিলেন তিনি। শিক্ষার্থী বাড়তে থাকায় তার দায়িত্বও বাড়ে।
নাবিল আরও জানান, ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাবারের কষ্ট হচ্ছিল। তবে বাকিদের সঙ্গে সমন্বয় করে খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। আবার তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থীরাও তার জন্য খাবার নিয়ে আসবে বলে জানালেন নাবিল।
তিনি জানান, ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাবারের কষ্ট হচ্ছিল। তবে বাকিদের সঙ্গে সমন্বয় করে খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। আবার তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থীরাও তার জন্য খাবার নিয়ে আসবে বলে জানালেন নাবিল।
হল খোলা রাখা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, বন্ধগুলো মূলত বাড়ি যাওয়ার জন্য দেওয়া হয়। তারপরও কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষাসহ নানা কারণে হলে থাকেন। তাদের জন্য ঈদের দিন বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। সকালের নাস্তায় পরোটা, ভাজি ও ডিম এবং দুপুরে থাকবে পোলাও, ডিম, মুরগির রোস্ট, খাশি বা গরুর রেজালা ও কোমল পানীয়।
ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বশেফমুবিপ্রবি) শেষেরদিকে স্থাপিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্যবারের মত এবারও ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে হল সমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় সকল ছুটিতেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন অনুযায়ী বয়স দুই-তিন যুগেরও বেশি সময় হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসে হল বন্ধ থাকছে। এবারের ঈদ-উল-আজহার ছুটিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) হল বন্ধ করেছে।
এছাড়া এই ছুটিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) তিনটি ছাত্র হল খোলা থাকলেও মেয়েদের দুই হলের মধ্যে একটি হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) প্রশাসন ছাত্রীদের সব হল বন্ধ রেখে ছাত্র হলসমূহ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ (পাবিপ্রবি) বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলসমূহ খোলা রেখে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল বন্ধ রাখা নিয়েও একাধিক যুক্তি রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফরিদুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের হলগুলোতে কিছু সংস্কার কাজ প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য কিছু বরাদ্দও এসেছে। আমরা এই ছুটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। এজন্য হল বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অধ্যাপক ফরিদুল আলম বলেন, কেউ হলে থাকতে চাইলে উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করে প্রভোস্ট বরাবর জমা দিতে হবে। সেই আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে অনুমতি সাপেক্ষে হলে থাকতে পারবেন আগ্রহী শিক্ষার্থীরা।