স্বপ্নের বাহন নীল-সাদা বাস: রাবিতে ভর্তিচ্ছুদের বড় অনুপ্রেরণার কারণ
সৌন্দর্য প্রেমী অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কারুকার্যপূর্ণ নান্দনিকতার প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। লাখ-লাখ শিক্ষার্থীর আবেগ, অনুভূতি আর প্রেমাবেগে রূপের রাণী হয়ে জেগে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এই রাণীর স্বর্গে সৌন্দর্য প্রতীমার মধ্যমনি হিসাবে জায়গা দখল করে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল-সাদা বাসগুলো।
অপরূপ সৌন্দর্যে শোভিত ক্যাম্পাসের মাধুর্যতা পূর্ণতাদান করতে যেন প্রাণভোমরার ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে বাসগুলো। সারিতে সারিতে যখন পরিবহণ চত্বরে লজ্জাবতী লতার মতো ঠাঁই করে দাঁড়িয়ে থাকে বাসগুলো; তখন শুধু তারা দাঁড়িয়েই থাকে না হাজার হাজার শিক্ষার্থীর গল্প, গান, আড্ডা, যাত্রা স্মৃতির গল্প হয়ে জেগে থাকে। অনবরত করতে থাকে নব-স্মৃতির মালা রচনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণের ঝুলিতে এখন বাস আছে ৩০টি। তবে চালক সংকটের কারণে ১৪টি রোডে বাস চলে ২২টি নীল-সাদা বাস। সকাল ৮টা ০৫ মিনিটে ক্যাম্পাস থেকে প্রথম রুট ছেড়ে যায় একে একে ২২টি নীল-সাদা বাস। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরো ৩টি ট্রিপ যায়। বাসে চেপে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছায় স্বাচ্ছন্দ্যে।
শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় এবং প্রথম প্রেমের গল্প নীল-সাদা বাসের সংস্পর্শ আসার উদ্দীপনা থেকেই শুরু হয়। এক অজানা মায়ার আবেশে স্নিগ্ধ ছায়ার মতো মিলে যায় অনুভূতিগুলো। কখন বাসের সাথে একটি ছবি তুলব, একটু প্রেমাবেশে তার ছায়ার পরশে এক টুকরো ভালোবাসার স্বাদ আচ্ছাদন করব। একটু মায়াবতীর মায়াছায়ায় শীতল হবো এই বাসনায় অধীর আগ্রহে সময় কাটতে থাকে। সত্যিই প্রথম প্রেমিকাকে ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন, তার সাথে একটু সখ্যতা গড়া কিংবা রঙিন একটা ছবি তোলার জন্য অপেক্ষার মুহূর্ত কতই না নিদারুণ হবে। সাথে একটু ঝটিকা সফর যেন স্বপ্নের মতো।
নীল-সাদা সখি যখন হালকা ফিরফিরে বাতাসে মধ্য দিয়ে চলে যাত্রীর কপালের এলোচুলগুলো যখন উড়তে থাকে। আঁকা-বাঁকা রাস্তা দিয়ে রূপসীর কমরে কসলের মতো মৃদু আবেশে দেহ দুলার মতো দুলে উঠে তার দেহ; এ যেন পূর্ণতার ছোঁয়া হয়ে ধরা দেয়। দলবেধে বাসগুলো যখন শহরের রাস্তাগুলো দাপিয়ে বেড়াতে বের হয়; মনে হয় নীল-সাদা বনের একঝাক ষোড়শ তরুণী কতই না স্নিগ্ধতার আবেশ ছড়াতে চাকাগুলো ছুড়ে হাওয়ার সাথে ভেসে যাচ্ছে।হর্নের শব্দ যেন শব্দ নয়; এ এক অজানা মধুর সুর। কেনই বা মনে হবে না প্রেয়সীর বোবামুখের আওয়াজেও যে প্রেমিক নান্দনিকতার ছাপ খুঁজে পায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণের ঝুলিতে এখন বাস আছে ৩০টি। তবে চালক সংকটের কারণে ১৪টি রোডে বাস চলে ২২টি নীল-সাদা বাস। সকাল ৮টা ০৫ মিনিটে ক্যাম্পাস থেকে প্রথম রুট ছেড়ে যায় একে একে ২২টি নীল-সাদা বাস। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরো ৩টি ট্রিপ যায়।
নীল-সাদা বাসের সাথে সখ্যতার ব্যাপারে ছাড় দিতে রাজি নন তার কোনো প্রেমিকই। 'তোমরা যে যাই বলো ভাই, তাল গাছটা আমার' এমনই দাবি করে শিক্ষার্থীরা রাবির সৌন্দর্যকে সেরা সৌন্দর্য আর অনিন্দ্য সুন্দরের প্রতীক এই বাসগুলোকেই দেখে থাকেন।
তাই তো নীল-সাদা প্রেয়সীর সাথে প্রথম ভাবের কথা বলতে গিয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র রাহজুল আমিন রাব্বি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশাল আয়তনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ একজন শিক্ষার্থীকে মুগ্ধ করার মতো অনেক ধরনের সৌন্দর্যই এখানে রয়েছে৷ এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং খুব বেশি পরিমাণে দৃষ্টি-আকর্ষণ করে রাবির নীল-সাদা রঙের বাসগুলো৷ এক কথায় রাবির সৌন্দর্যের রাণী এই বাসগুলো। নীল-সাদা রঙে মোড়ানো এই পরিবহণই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন৷ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের বড় অনুপ্রেরণার কারণ৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবে এই বাসের যাত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখে অসংখ্য শিক্ষার্থী৷
প্রথম এসেই কখন তার সিটে বসে মনকে শীতল করবো; এই আগ্রহ আর উৎকণ্ঠাতে যেন সময়ই কাটে না। প্রথম বাসে উঠেই দেখলাম আরও অনেকেই আমার মতো বাসে উঠতে পেরে খুব আনন্দের সঙ্গে বলতেছে যে আজকে বাসে উঠেছি; এটা যেন অন্যরকম খুশি। এ অনুভূতি যেন প্রকাশ করার ভাষা তৈরি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বাসের যাত্রীরা সমমনা হওয়ায় তাদের মধ্যে একটা সখ্যতা তৈরি হয়৷ যাত্রাপথে শিক্ষার্থীরা কখনো দলবেঁধে গান করেন, বিভিন্ন ধরনের গল্প হয় তাদের মধ্যে৷ ফলে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ বেড়ে যায় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও তৈরি হয়৷ আমার প্রিয় এবং ভালোবাসার যানবাহন নীল-সাদা রঙের বাসগুলো৷ এটা আমার আবেগ, অনুভূতি এবং সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার একটা জায়গা। আমি রাবির শিক্ষার্থী হতে পেরে যতটা গর্বিত ঠিক ততটাই গর্বিত নীল-সাদা বাসের একজন নিয়মিত যাত্রী হতে পেরে।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম সানিয়া নীল-সাদা বাসের প্রতি অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে জানান, রাবিতে ভর্তি হওয়ার আগে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগা কাজ করছে রাবির নীলসাদা বাস দেখে।ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দিনেই বাসের সাথে ছবি তুলতে হবে এটা একটা ট্রেন্ড। প্রতিটা নতুন শিক্ষার্থীর মাঝে এটা কাজ করে যে এটা নিজের ক্যাম্পাসের বাস। প্রথম এসেই কখন তার সিটে বসে মনকে শীতল করবো; এই আগ্রহ আর উৎকণ্ঠাতে যেন সময়ই কাটে না। প্রথম বাসে উঠেই দেখলাম আরও অনেকেই আমার মতো বাসে উঠতে পেরে খুব আনন্দের সঙ্গে বলতেছে যে আজকে বাসে উঠেছি; এটা যেন অন্যরকম খুশি। এ অনুভূতি যেন প্রকাশ করার ভাষা তৈরি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ভর্তি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে কিছু ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে বাসে উঠলাম। আমরা জানি না বাস কোথায় যাবে। আমাদের শুধু একটাই লক্ষ্য তখন বাসে উঠবো। বাসটা যখন ছেড়ে দেয় তখন সেরা অনুভূতি হলো যে এটা আমাদের বাস, নিজেদের বাস। আমরা সবাই একজন অন্যজনকে বলছিলাম এ কেবল নীলসাদা বাস নয়; এটা আমাদের অন্তরের প্রশান্তির একটি বাহনও বটে। এটা আমাদের আবেগ, আমাদের গর্ব।