চবি ছাত্রলীগের ৪ কর্মীর বিরুদ্ধে সাংবাদিক হেনস্থার অভিযোগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের ৪ কর্মীর বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়ে তারা সাংবাদিকদের হেনস্তা করেছে বলে অভিযোগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস)।
আজ রবিবার (১৮ জুন) দুপুরে চবি প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার বরাবর এ অভিযোগ জমা দিয়েছে চবিসাস। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন কর হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর।
আরো পড়ুনঃ ছাত্রলীগের আন্দোলনে যবিপ্রবিতে দ্বিতীয় দিনেও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার (১৬ জুন) বেলা ১১টার দিকে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের দুই নম্বর গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত নোয়াখালী জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির নির্বাচনে বাধা দেন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নূর উদ্দিন খান, শেখ আহাম্মদ, উপ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আরমান হোসেন রোমান এবং ছাত্রলীগ কর্মী মো. তামজিদুল ইসলাম। এছাড়া শাখা ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রুপের অনুসারী ও ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ইমরান বিন হামিদ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী কাজি মেহেদী হাসানসহ বেশ কয়েকজন তাদের সহযোগী হিসেবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ধারণ না করা সত্ত্বেও নূর উদ্দিন খান একজন সাংবাদিককে 'ভিডিও কেন করছো?' বলে মোবাইল চেক করতে চাইলে প্রতিবাদ জানান ওই সাংবাদিক। পরে নুর উদ্দিন ও তার অনুসারীরা সাংবাদিকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে তাকে হেনস্তা করেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে পুরো ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহকালে সেখানে উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দপ্তর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসহ বেশ কয়েকজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন চবি ছাত্রলীগের এসব কর্মীরা। এসময় সাংবাদিকদের হলুদ সাংবাদিকসহ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে হেনস্থা করাও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়, নূর উদ্দিন খানসহ অভিযুক্তদের নামে এর আগেও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা, মোবাইল চেক করে হুমকি-ধামকিসহ বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। তারা সকলেই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী। বিষয়টি রুবেলকে জানানো হলে তিনি দেখবেন বললেও এরপর তাকে আর মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। আমরা মনে করি রেজাউল হক রুবেলের পরোক্ষ মদদেই তারা এরকম ঘৃণ্য ও অস্বাভাবিক আচরণ করার সাহস পেয়েছে।
অভিযোগ পত্রে আরও বলা হয়, এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী সাংবাদিক হেনস্থার ঘটনায় জড়িতরা হলেন, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স ২০১৫-১৬ সেশনের নূর উদ্দিন খান; রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের একই সেশনের শেখ আহাম্মদ; কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন রোমান এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-২০১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মো. তামজিদুল ইসলাম।
এ বিষয়ে চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহবুব এ রহমান বলেন, এর আগেও বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা ও হুমকি দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অধিকাংশ ঘটনার বিচার হলেও কিছু ঘটনার বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ঘটনার বিচার নিশ্চিত করবে।
চবি প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেওয়া অপরাধ। আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে রেজিস্ট্রারকে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য জানিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।