প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হলে ‘মৌখিকভাবে’ দ্বিতীয় বিয়ে করি: ঢাবি ছাত্র
প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হলে ‘মৌখিকভাবে’ দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম সীমান্ত। তার দুই বউও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী। তবে প্রথম স্ত্রী অভিযোগ, তাকে না জানিয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন সীমান্ত। এতে সামাজিকভাবে সম্মানহানি হয়েছে তার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থীর দুই বিয়ে করার খবরটি সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসে। বর্তমানে এটি ক্যাম্পাসে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। অনেকে এটা নিয়ে ট্রল করছেন আবার কেউ হাসাহাসি করছেন।
আরও পড়ুন: টক অব দ্য টাউনে ঢাবি ছাত্রের ‘মৌখিকভাবে’ দ্বিতীয় বিয়ে, যা জানা গেল
জানা যায়, সীমান্তের প্রথম স্ত্রী এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। তিনিও একই ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী। এই সংসারে তাদের ৮ মাস বয়সী একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। পরে লোকপ্রশাসন বিভাগের একই ব্যাচের মেহেরুন্নেসা মীমকে ‘মৌখিকভাবে’ বিয়ে করেন সীমান্ত। যদিও এক মাসের সংসারের পর আবার তাদের মৌখিভাবে ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়।
আজ শুক্রবার রাতে পুরো ঘটনা তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম সীমান্ত। নিচে সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল-
“আমাকে নিয়ে বিগত দুইদিন ধরে আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে অর্থাৎ আমি দ্বিতীয় বিবাহ করেছি, এ বিষয়গুলো আমি পরিস্কার করছি। হাবিবার সাথে আমার বিয়ে হয় মূলত ২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে ও পারিবারিকভাবে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়েতে দেনমোহর ছিলো এক লাখ একটাকা ৫০ হাজার উসুলসহ।
আমি হাবিবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেই এবং প্রাথমিকভাবে আমাদের একমাসের মতো জানাশোনা হওয়ার পর ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী সেন্ট্রাল মসজিদে বিয়ে করি যার সাক্ষী ছিলো আমার বন্ধু সাঈদ ও তোফায়েল এরপর একমাসের ভেতরেই হাবিবা সন্তানসম্ভবা হয়। এবং ১০ মাস পর অক্টোবরের এক তারিখ আমাদের একটি পুত্র সন্তান হয়। এর মধ্যেই হাবিবার সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হওয়ার চার পাচমাসের ভেতরেই হাবিবার সন্তানসম্ভবা হওয়ার দরূণ তার সাথে বিভিন্ন কারণে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয় একইসাথে শারীরিক দূরত্বও সৃষ্টি হয়।
২০২০ সালে ফেসবুক ফ্রেন্ড মীমের সাথে সেভাবে যোগাযোগ না থাকলেও, হাবিবার সাথে এই দূরত্বের মাঝে ওর সাথে আমার যোগাযোগ সৃষ্টি হয় আবার ফেসবুকেই, এরই মাঝে মীমের সাথে অনেকবার সরাসরি কথা বার্তাও হয় ক্যাম্পাসে এবং মীম জানায় যে সে বিয়ে করতে আগ্রহী, পাত্র খুজতে চায়। এবং এভাবেই ওর সাথে আমার কথাবার্তা এগোতে থাকে। হাবিবার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণে এক পর্যায়ে আমি মীমকে বিয়ের প্রস্তাব দেই ২০২২ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে এবং তখন কথাবার্তা এমন ছিলো যে আমি যখন প্রতিষ্ঠিত হবো তখন বিষয়টা সামনে আসবে। কিন্তু মীম রাজি হয়নি প্রথমদিকে। তারপর একসপ্তাহ আমাদের মাঝে কথা বলা বন্ধ ছিলো। এরপর আমি আবার তাকে ম্যাসেজ দেই বিষয়টা নিয়ে পুনরায় ভাবার জন্য। শুরুর দিকে মীম আমাকে না করে ও নিরুৎসাহিত করে।
এরপর বিভিন্নভাবে তার সাথে আমার কথা হয় এবং কি কি বিপদ হতে পারে এটা নিয়ে আমরা দুজনেই আলোচনা করি, কি কি সমাধান হতে পারে সেটাও আলোচনা করি। এরপরও আমাদের দুজনের মাঝেই দোটানা চলতে থাকে অনেক। তারপর এটাও আসে যে মীম তার লাইফস্টাইল পরিবর্তন করবে, সে নামাজ কালাম পড়বে এরকম একটা পজিটিভ চিন্তা ভাবনা তার ভেতরেও কাজ করে, আমিও বিষয়টা নিয়ে খুব আগ্রহী ছিলাম কারণ কেউ একজন ভালোভাবে তার লাইফ লিড করবে এটা আমারও পছন্দের বিষয় ছিলো।
এরপর অনেক দোটানার অনেক মাঝেও মীমের সাথে শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের আগস্টের ১১ আগস্ট মে রাজি হয় এবং এর একসপ্তাহ পরেই ২০২২ সালে ১৮ আগস্ট বিয়ে হয়। বিয়ের পদ্ধতি ছিলো একদম মূল বিষয়গুলো, ইজাব-কবুল-দেনমোহর এই মূল বিষয়গুলো সাক্ষীসহ বাস্তবায়ন হয়। আমরা এই বিয়েটি নিরাপত্তাজনিত কারণে মসজিদে করার কথা থাকলেও, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ আগস্ট ২০২২ বিকাল ৩ ঘটিকার দিকে পিয়াল, হাসান সাক্ষীদ্বয়ের সামনে বিয়েটা পড়ানো হয়। এখানে মৌখিকভাবে বিয়েটা আমার সাথে হয়।
এরপর কোনো আইনানুযায়ী ডকুমেন্ট ছিলো না, কিন্তু ১০ হাজার একটাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে করি। দেনমোহর ধীরে ধীরে পুরোটা পরিশোধও করি। এরপর একদিন একসাথে থাকা হলেও আমাদের আলাদাই থাকা হতো যেহেতু দুজনেরই থাকার জায়গা আলাদা। এরপরে আলাদা থাকা হলেও নবাবগঞ্জের একটি বাসা ভাড়া নেই এবং অক্টোবরের প্রথমদিকে সেখানে সপ্তাহখানেক থাকা হয়।
অক্টোবেরের এক তারিখে আমাদের বাবু হয়, এরপর আমার মাঝে ভীষণ অনুতাপ সৃষ্টি হয় এবং এই সম্পর্ক শেষ করার জন্য বলতে থাকি। এরপর আমার এই অনুভূতিতে মীমের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং ঝগড়া-মনোমালিন্যও হয়। এরপর আমার কান্নাকাটি আর বারং বার অনুরোধের জন্য মীম রাজি হয় এবং ১৭ অক্টোবরে মৌখিকভাবে দুইতালাক দেই, এরপর আমার খুবই খারাপ সিচুয়েশন হয়, সুইসাইড পর্যায়ে চলে যাই, এই সম্পর্কের জন্য, তখন মীম এসে আমাকে সামলায় এবং ঐদিন শেষ একসাথে থাকা হয়।
এরপর তার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ হতো না, কোনো প্রকারের কোনো এটাচমেন্ট - সম্পর্ক ছিলো না। এরপর তার সাথে আবার যোগাযোগ হয় এবং এরপর বাইরে থাকা হয় এবং মাঝে ফেনীতেও ঘুরতে যাওয়া হয়। এরপরও আমাদের মাঝে যোগাযোগ হতো এবং টিকায় রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুজনেই দোটানায় থাকতাম, ব্যাপক অনুতাপ হতো দুজনের মাঝেই, এবং ফাইনালি আমরা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
আমি আমার প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া মৌখিকভাবে বিয়ে মীমকে করেছি এবং মীম আমাকে এটার রাষ্ট্রীয় আইনানুযায়ী কাগজপত্রও করার কথ বলতো যাতে বিয়ে ডকুমেন্টেড হয় এরপর একদিন আমি ডকুমেন্ট করার কথা বললে মীম আমার পরিবার, সন্তান সবকিছু ভেবে আগাতে পারেনি।
এরপর এ বিষয়টা আমি হাবিবার কাছে অনেকবার বিষয়টা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষ মুহূর্ত গিয়েও পারিনি। এরমাঝে এতো প্রেশার, এতো চাপ, টাকার পয়সার চিন্তা, পড়াশোনা সব মিলায় আমি মানসিকভাবে অনেক বিধ্বস্ত ছিলাম যার কারণে আমি হাবিবার সাথে অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করতাম। কারণ আমি কাওকে বলতেও পারতাম না সইতেও পারতাম না।
বিষয়টা নিয়ে আমি শুরু থেকেই প্রচন্ড অনুতপ্ত ছিলাম, বিশেষ করে বাচ্চা হওয়ার পরে আমার অপরাধবোধ অনেক তীব্র হয় যার কারণে আমি যেকোনোভাবে চাইতাম বিষয়টা যতদূর হয়েছে থাকুক, গোপন থাকুক এবং আমরা তিনজনই নিজেদের মত বাঁচতে পারি।
এরই মাঝে প্রায় চার-পাচমাস কেটে যায়, যেখানে মীমের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ ছিলো না, আমি মাত্রই ট্রমা থেকে বের হই, এজন্য হাবিবার সাথে খারাপ ব্যবহার করতাম, একা থাকতে চাইতাম, যেইটা হাবিবা মেনে নিতে পারতো না, এরজন্য আরো খারাপ ব্যবহার করা হয় ওরসাথে। এখানে হাবিবার দোষ যতটা না ছিলো আমার দোষ বেশি ছিলো কারণ আমি একপ্রকার ট্রমার ভেতরে ছিলাম, একাকী থাকতে চাইতাম, এতোকিছু ঘটে যাওয়ার পরও হাবিবাকে কিছু বলতে না পারার আক্ষেপ সবসময় থাকতো।
১৩ তারিখ ২০২৩ জুন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদে কোনো একজন anonymously হাবিবার ওপর হওয়া খারাপ ব্যবহারগুলো পোস্ট করে, যার ফলে কোনো এক সাক্ষী বা বিয়ের ব্যাপারটা যারা জানতো তাদের মধ্যে কেউ এটা ফাঁস করে দেয়। এরপর আমি হাবিবা ও তার পরিবারের কাছে সব খুলে বলতে বাধ্য হই এবং ভীষণভাবে অনুতপ্ত হই, অপরাধবোধে ভুগতে থাকি, এবং যেহেতু সন্তান আছে তাই তাদের দিকে চেয়ে অন্তত হাবিবার সাথে আার বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় থাকে সেটা অনুরোধ করি। এবং দুই পরিবারের মীমাংসার মাধ্যমে হাবিবার ও আমার সন্তানের সম্পূর্ণ ভরণপোষণ বহন করা এবং পরবর্তীতে আর কখনো অনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত না হওয়ার আইননুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
কিছু বিষয় ক্লিয়ার করা দরকার, এখানে মীম যতটা না দোষে ইনভলব তার চাইতে অনেক বেশি আমি দোষী ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম বিষয়টা আমি পারিবারিকভাবে সুরাহা করতে পারবো কিন্তু বাবু হওয়ার পর আমার ভিতরে অনেক অনুতাপ সৃষ্টি হয়। এরপরই এটা বন্ধ করাে চেষ্টা করেছি যাতে সব স্বাভাবিক হয়।
মীমের ডিভোর্স ছিলো এবং পূর্বের স্বামীর পাশবিক নির্যাতনের জন্য ওর ছয়মাসের বাবু মিসক্যারেজ হয়, যা অনেকেই অনেক বাজেভাবে বলতেছেন, বাজেভাবে তার চরিত্র নিয়ে উপস্থাপন করতেছেন। এখানে দোষ আমার, স্বীকার করেছি এবং মীমের কাছ থেকে এ বিষয়ে আমাদের সমঝোতাও হয়েছে। এবং হাবিবার সাথে সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করার প্রত্যয়েই আমি ওর সাথে বিচ্ছেদ করি। কিন্তু কোনোভাবে এটা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আমার নিজের পরিবার, আমার সন্তান-স্ত্রী, মীমের পরিবার সামাজিক-মানসিকভাবে ব্যাপক আকারে হেনেস্তার স্বীকার হচ্ছে।
আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন, আমার ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করবেন। মানুষ মাত্রই ভুল, আমার মতো ভুল কেউ যেনো না করে এজন্যই এভাবে বিস্তারিত বলা। অনলাইনে কিছু কুচক্রীদের জন্য আমাদের পার্সোনাল পারিবারিক বিষয় আজ সমাজে হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। আমাদের পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আমার ভুলের জন্য এতোগুলো মানুষ যেনো আর কষ্ট না পায় আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ রইলো।”