০৭ জুন ২০২৩, ১৩:৪৮

খুড়িয়ে চলছে রাবি ছাত্রদল, ক্যাম্পাসে নেই দৃশ্যমান কার্যক্রম! 

রাবি ছাত্রদল  © লোগো

বিএনপির রাজপথের শক্তির উৎস বলা হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে। বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রামে সেটা প্রমাণও করেছে সংগঠনটি। তবে গত কয়েক বছর ধরে ছাত্র সংগঠনটিকে সেই ভূমিকায় দেখা যায়নি। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের অবস্থান এখন তেমন নেই বললেই চলে। একসময়ের জাতীয়তাবাদী শক্তির দুর্গ হিসেবে খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও গত কয়েক বছর  দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই সংগঠনটির।

এর কারণ হিসেবে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মারমুখী আচরণ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং দলীয় অন্তঃকোন্দলকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি গত ৭ বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি ছাত্রদল। দুই বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটিতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে তাদের দলীয় কার্যক্রম। 

মাঝেমধ্যে কিছু দলীয় প্রোগ্রাম ক্যাম্পাস সংলগ্ন এবং এর আশেপাশে পালন করতে দেখা গেছে সংগঠনটিকে। তবে ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি দীর্ঘদিন ধরে। সংগঠনটিন দায়িত্বশীলদের অভিযোগ নিরাপত্তাহীনতা ও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হামলার কারণে ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম করতে পারেন তারা।

আরো পড়ুন: ঢাবির কলা অনুষদে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীই ফেল

জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণের দীর্ঘ ৫ বছর পর ২০২১ সালের ১৬ জুন রাবি শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। দুই বছর মেয়াদি রাবি ছাত্রদলের ওই কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতান আহমেদ রাহী এবং সদস্য সচিব ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুদ্দিন চৌধুরী সানিন। সম্মেলন ছাড়াই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়।

তবে এরপরও সক্রিয় হতে পারেনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদল। আহ্বায়ক কমিটির মধ্যেও তিনজন ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন দুইজন ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে একজনকে। সে হিসেবে বর্তমান কমিটিতে ২৫ জন সদস্য আছে। এছাড়া জানা গেছে, দলীয় অন্তঃকোন্দলে জর্জরিত হয়ে পড়েছে ছাত্র সংগঠনটি। তবে বৃহৎ সংগঠন হওয়ায় এমন অন্তঃকোন্দল আছে বলে জানান দলটির এক সিনিয়র নেতা।

এদিকে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের দুই মাস না যেতেই ১৩ আগস্ট সদস্য সচিব সানিনের বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতামূলক' আচরণের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দেন সংগঠনটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ আলীসহ ১৭ নেতাকর্মী। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল বহিরাগত মাদকসেবীদের ইন্ধন জোগানো, নিজ ইউনিটের নেতাকর্মীদের হেনস্তা, দলীয় ফোরামে মনগড়া তথ্য দেওয়া, ফোনে হুমকি-ধামকি ও দলীয় প্রটোকল ভেঙে বহিরাগতদের লালন ইত্যাদি। 

এছাড়া, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে রাবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সামসুদ্দীন চৌধুরীর ওপর মারধরের অভিযোগ ওঠে একই দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মেহেদী হাসান ও আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

আরো পড়ুন: ঢাবির কলা ইউনিটের ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১১১৬৯

দলের একটি সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২১ অক্টোবর রাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গোপনে ব্যানার লাগাতে এলে তাদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং করা কমে যায় তাদের। দু'একটি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আর কোনো কর্মসূচিই পালন করেনি তারা। গত বছরের ১ আগস্ট ক্যাম্পাসের বাইরে বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল। এক কেন্দ্রীয় নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে ২৮ আগস্ট কাজলা গেটের কাছে বিক্ষোভ মিছিল হয় দলটির পক্ষ থেকে। লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে ২ আগস্ট বিক্ষোভ করে দলটি। সেটাও ছিল ক্যাম্পাসের বাইরে। সবশেষ চলতি বছরের ২ মার্চে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ-এর মুক্তির দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে সমাবেশ করেছিল রাবি শাখা ছাত্রদল। এরপর সাম্প্রতিক সময়ে বড় কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি সংগঠনটি।

সংগঠনটির সদস্য (দফতর) নাফিউল ইসলাম জীবন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দীর্ঘদিন জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় না থাকায় ছাত্রদলের অবস্থা আগের মতো নেই। ফলে দীর্ঘ পাঁচ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি দলের যখন সংকটময় মুহূর্ত থাকে তখন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তাছাড়া সবাই তাদের ভবিষ্যৎ চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অনেকে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। তবে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমাদের সংগঠন ঠিকই আগের জায়গায় ফিরে যাবে। আমাদের কোনো কর্মী সংকট নেই। মূলত যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের ছাত্র সংগঠনগুলো সক্রিয় থাকে। এটাই স্বাভাবিক। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে ছাত্রলীগ সক্রিয় আছে। 

ক্যাম্পাসের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের কার্যক্রম ঠিকই আছে। তবে আগের মতো বেশি সক্রিয় না থাকার কারণ হলো ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহাবস্থান নেই। রাজনৈতিক সহাবস্থান না থাকলে বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠন হিসেবে কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করব? যেকোনো কার্যক্রমে ছাত্রলীগের মারকুটে রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহযোগিতাও আরেকটি কারণ। বর্তমান প্রশাসন আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গসংগঠন হিসেবে কাজ করছে। শুধু ছাত্রলীগের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে বাকি সকল সংগঠনকে অসহযোগিতা করছে। নতুন কমিটির পক্ষ থেকে ভিসি স্যারের সাথে আমরা সাক্ষাৎ করতে চাইলে স্যার আমাদের সুযোগ দেননি। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের পদধারী কোনো নেতা হলে থাকতে পারেন না। তবে কর্মীরা হলে আছে। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা প্রশাসন দিতে পারে না। হলে থাকলে ছাত্রলীগ মারবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নাই। নিরাপত্তাহীনভাবে আমরা ক্লাসে যাই। এত কিছুর পরেও আমরা ক্যাম্পাস ছাড়ি নাই। 

আরো পড়ুন: বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির শর্ত শিথিল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একটি গতিশীল ছাত্র সংগঠন। ছাত্রদলের নিজস্ব স্বকীয়তা ও আদর্শকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে দলটি। বর্তমানে দেশে এক বিরূপ রাজনীতি বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসগুলো সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী দ্বারা জিম্মি করে রাখা হয়েছে। হলে হলে শিক্ষার্থী নির্যাতন চলছে৷ তবুও হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষার্থীদের হলে থাকার জন্য ছাত্রলীগকে চাঁদা দিতে হয়৷ আবার অনেকে চাঁদা দিয়েও হলে সিট পাচ্ছে না৷ হলের সকল কর্তৃত্ব ছাত্রলীগের হাতে৷ প্রশাসনের নীরব ভূমিকা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর একাধিক মামলায় জর্জরিত। এজন্য আমরা হলে থাকতে পারি না।
 
ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে প্রোগ্রাম করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারায় গণতান্ত্রিক উপায়ে সকল দল ও মতের শিক্ষার্থীরা অবস্থান করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেরকম পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ ফলে আমরা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে মিটিং মিছিল করা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছি। তবে আমাদের কার্যক্রম ঠিকই চলমান রয়েছে।

দলীয় অন্তঃকোন্দল বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রদল একটি বড় রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন। বড় দল হওয়ায় এখানে যেমন অসংখ্য নেতাকর্মী রয়েছে, তেমনি নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতাও রয়েছে৷ আমি এখানে গ্রুপিং দেখি না। দেখি রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা।