ঢাবির হিজাব ইস্যুতে উপাচার্যের ব্যার্থতায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ নারী শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা, ভাইভা ও প্রেজেন্টেশনের সময় কানসহ মুখমণ্ডল খোলা রাখার নোটিশের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় উপাচার্যের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (৫ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নারী শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এসময় তারা উপাচার্যের ব্যার্থতায় হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, হিজাব পরিহিতাদের শিক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত করার প্রয়াসে বাংলা ডিপার্টমেন্টের দেওয়া নোটিশের বিষয়ে উপাচার্যের পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা আমাদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা, ভাইভা ও প্রেজেন্টেশনের সময় কানসহ মুখমণ্ডল খোলা রাখার নির্দেশ দিয়ে যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর আমরা ৫ দফা দাবি নিয়ে ভিসি স্যারের সাথে সাক্ষাত করেছিলাম। তিনি আমাদের দাবিগুলো শুনেছিলেন এবং এগুলোর যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন। আমাদের উপস্থিতিতেই বাংলা ডিপার্টমেন্টের কোনো একজন কর্মকর্তাকে কল করে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করতে বলেছিলেন।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা ভেবেছিলাম উপাচার্য স্যার সত্যিই অভিভাবকত্বের দায়িত্ববোধ প্রদর্শন করবেন। আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে ক্লাসরুমেও ফিরে গিয়েছিলাম কিন্তু পরীক্ষা ঘনিয়ে আসতেই আমরা দেখতে পেলাম আমাদের সেই বিশ্বাস ও ভরসা ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। বাংলা বিভাগ তার পূর্বের সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে এবং আবারও বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আমাদের বোনদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে আমাদের হতাশা ও ক্ষোভের কথা জানাচ্ছি এবং অভিভাবকত্বের জায়গায় ভিসি স্যারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করছি।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর একজন হিজাব পরিহিতা শিক্ষার্থীকে ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এবং এটাকে উপলক্ষ্য করে তার একাডেমিক লাইফকে দুর্বিষহ করে তোলার এই ঘটনাগুলো মানবাধিকার ও ধর্মীয় অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন নয় কি? আমরা স্পষ্ট ভাষায় এটাকে মানবতাবিরোধী এবং দেশীয় আইন ও ইউনিভার্সিটি অর্ডারের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করছি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমণ্ডল খোলা রাখার প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা পাঁচ দফা দাবি জানান। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তাদের দাবি মেনে নিয়ে আশ্বাস প্রদান করলে শিক্ষার্থীরা শ্রেণী কক্ষে ফিরে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে আবার সেই নোটিস বহাল রাখা হলে আজ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখা সংক্রান্ত নোটিশ বাতিল করতে হবে।
২. পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় পরীক্ষার পূর্বেই নারী কর্মচারী কিংবা নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা রুমে হিজাব ও নিকাব পরিহিতাদের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৩. দ্রুততম সময়ে সকল অনুষদের সকল বিভাগে হিজাব-নিকাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্থা করা বন্ধে নোটিশ প্রদান করতে হবে।
৪. বিভিন্ন সময়ে ক্লাসরুমে, ভাইবা বোর্ডে অথবা পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করা অথবা কটূক্তির মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের শ্রীলতাহানি করার মতো ঘটনাগুলো তদন্তপূর্বক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. হিজাব বা নিকাব পরিধানে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বিধিতে ধারা যুক্ত করতে হবে এবং ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ঘটনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় ফিরিয়ে এনে অথবা ভিন্ন উপায়ে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
উল্লেখ্য, পরীক্ষার্থীর পরিচয় শনাক্তের সুবিধার্থে পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশন চলাকালে শিক্ষার্থীর কান–মুখ খোলা রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দেওয়া বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্টে আদেশ দিয়েছিলেন। গত ২৯ মে হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে এখন একজন নারী শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশনের সময় পরিচয় নিশ্চিত করতে মুখ ও কান খোলা রাখতে হবে।