০৫ জুন ২০২৩, ১৪:০৯

জাবিতে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ, প্রশাসনের নিরবতায় আদালতে মামলা 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

হলের 'গেস্টরুমে’ না যাওয়াকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীকে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের র‍্যাগিং ও নির্যাতনের পর লিখিত অভিযোগ করার পরও প্রশাসন থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভুগী শিক্ষার্থী সায়েম হাসান ওরফে সামি। রবিবার (৪জুন) দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম) আদালতে এ মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সায়েম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হলেও থাকেন শহীদ সালাম-বরকত হলে। র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযোগ দেওয়ার ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি বলে দাবি তাঁর। প্রশাসনের প্রতি আস্থা নেই জানিয়ে আদালতে মামলা করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে মো. সায়েম হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও প্রশাসনের কেউ আমাকে কোনো ধরনের বিচারের আশ্বাস দেননি। এমনকি কোনোরকম যোগাযোগও করেনি। প্রশাসন এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তা আমার বুঝা বাকি নাই। প্রশাসন  এই জায়গায় একটি অজানা শক্তির কাছে পরাজিত। তাই উপায় না দেখে আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। 

মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, গতকাল দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছি। প্রক্টরের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখিত সবাইকে মামলার আসামি করা হয়েছে।

শহীদ সালাম-বরকত হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ মাহিবুবুল মোর্শেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা অভিযোগপত্রটি পাওয়ার পরেই হলের ওয়ার্ডেন সুব্রত বণিককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রিপোর্ট দিবে বলে আশা করছি। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উপর আস্থা নেই বলেই শিক্ষার্থীরা আদালতের দারস্থ হচ্ছেন বলে মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ঠদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রথম দায়িত্ব। এক্ষেত্রে একটি আবাসিক হলে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে একটি ছাত্রকে মারধর করার পরেও যদি প্রশাসন নিরব থাকে; তাহলে বুঝা যায় এই প্রশাসনের প্রশাসানিক কোনো অস্তিত্বই নেই। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কাছে ভরসাযোগ্য নয় বলেই তারা আদালতের আশ্রয় নিয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিষয়টি গতকাল শুনেছি। আমার মনে হয় একজন শিক্ষার্থীর প্রশাসনের উপর সর্বোচ্চ ভরসা রাখা উচিৎ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন স্পর্শকাতর বিষয়গুলো মোকাবিলায় সচেষ্ট আছে। তবে আবাসিক হলে আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়টি আমার জানা নেই। এই বিষয়টি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে লিখিত অভিযোগটি ঘটনাসংশ্লিষ্ট শহীদ সালাম-বরকত হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব দ্রুততার সাথেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করছি। আর আবাসিক হলে আগ্নেয়াস্ত্র থাকা টা ভয়ংকর। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

প্রসঙ্গত, গত ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের ১০২ নং কক্ষে  'গেস্টরুমে' না যাওয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কয়েকজন আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে ভুক্তভোগী সায়েমকে। এ ঘটনায় গত ২২ মে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিয়েছিলেন তিনি।