সিট দখল ঠেকাতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে রক্তাক্ত ঢাবি ছাত্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জহুরুল হক হলের সিট দখল ঠেকাতে গিয়ে শাখা ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হয়ে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৩১ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের টিনশেডের ২০ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থীর নাম দেলোয়ার হোসাইন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি ওই হলের ২০ নম্বর কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থী। এদিকে এ ঘটনাকে শিক্ষার্থীদের ‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব’ বলে উল্লেখ করেছেন হল প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড আব্দুর রহিম।
সরজমিনে দেখা যায়, জুনিয়র শিক্ষার্থী তুলে কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে দেলোয়ারের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতাহাতি হয়। পরে একে অপরকে কিল-ঘুষির একপর্যায়ে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে দেলোয়ারের মাথা ফেটে যায় ও সামনের দাত ভেঙে যায়। তবে দেলোয়ারের অভিযোগ, তাকে স্টাম্প দিয়ে মাথায় ও মুখে আঘাত করা হয়েছে। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন।
ঘটনায় জড়িত অপর তিন শিক্ষার্থী হলেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজীদ ইসলাম, আইইআর ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ, বিজয় একাত্তর হলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মিনহাজুল ইসলাম। ঘটনার সাথে জড়িত সকলেই ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এরা সবাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী বলে জানা গেছে।
ঘটনার পরে আহত দেলোয়ারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়ে। এরপর ছাত্রলীগের জহুরুল হক হল সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা ঘটনাস্থলে এসে ঘটনার মীমাংসা করে দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। একইসঙ্গে এ ঘটনায় সবাইকে শান্ত থাকার নির্দেশ দেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা ২০ নম্বর রুমের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ বলেন, বায়েজিদ বাড়ি থেকে এসে সবাইকে আম দিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছিলো। এসময় দেলোয়ার বায়েজিদকে বলে তোকে এতগুলা ফোন দিলাম, তোর সিটে জুনিয়র উঠাবো, তুই ফোন রিসিভ করিস না কেন? পরে বায়েজিদ দেলোয়ারকে বলে তুই আমাকে এতগুলো কল দিছিস কেন? জানিস না আমার নানা মারা গেছে!
‘‘তুই আমার সিটে জুনিয়র তোলার কে? সেটা করবে সিনিয়র ভাইয়েরা। কথার একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হলে দেলোয়ার বায়েজিদকে ঘুষি দেয়। এসময় দুজনের হাতাহাতি ফেরাতে যায় বিজয় একাত্তর হলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মিনহাজুল ইসলাম। মারামারির একপর্যায়ে দেলোয়ার চেয়ার তুলে বায়েজিদকে মারতে গেলে বায়েজিদ ধাক্কা দিলে তার মাথা ফেটে যায়। এসময় পড়ে গিয়ে বেঞ্চের উপর পড়লে বা দেয়ালে ধাক্কা খেলে দাতও ভেঙে যায়।’’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজীদ ইসলাম বলেন, দেলোয়ার আমায় গতকাল (বুধবার) বারবার কল দিয়ে তোর সিটে জুনিয়র তুলে দেবো, তুই আসিস না কেন? আমি আমার পরিবারের সাথে ডিনার করছিলাম তখন। ওর এসব কলের কারণে আমার বাবা-মাও টেনশনে পড়ে গিয়েছিলো। আমার নানাও মারা গিয়েছি কিছু দিন আগে। আমি সব সামলে আজকে হলে আসলাম। সবার জন্য আম নিয়ে আসলাম, ওকেও দিয়েছি। তখন ওকে বললাম তুই জানিস আমার নানা মারা গিয়েছে। এত্ত কল কেনো দিছিস?
তিন বলেন, এসব নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। ও এক পর্যায়ে গায়ে হাত তোলা শুরু করলে হাতাহাতি শুরু হয়। এসময় অন্যরা আমাদের থামাচ্ছিলো। একপর্যায়ে রুমের বাইরেও হাতাহাতি গড়ায়। তখন ও একটা চেয়ার আমার মাথায় মারতে তেড়ে আসে। তখন আমি ওকে ধাক্কা দিলে ওখানে থাকা একটা টেবিলের সঙ্গে আঘাত লেগে ও আহত হয়। আমি আমাকে বাঁচানোর জন্যই ওকে ধাক্কা দিয়েছি।
বিজয় একাত্তর হলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমি বায়েজিদের কাছে আসছি একটা কাজে। হঠাৎ দেলোয়ার বায়েজিদকে উগ্র ভাষায় গালি দিয়ে থাকে এবং বলতে থাকে তুই আমাকে চিনিস? আমার উপরে কথা বলিস! এসময় দেলোয়ার বায়েজিদকে ঘুষি মারে। আমি ফিরাতে গেলে আমাকেও মারতে চেষ্টা করে। পরে সে স্টাম্প নিয়ে মারার চেষ্টা করলে আমরা সবাই তাদের দুজনকেই বারান্দায় নিয়ে আসি। একপর্যায়ে সে চেয়ার দিয়ে মারতে আসলে উলটো ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলে দাত ভেঙে যায় ও মাথা ফেটে যায়।
এদিকে, অহত দেলোয়ারকে একাধিকবার কল দিলেও হাসপাতালে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনা প্রসঙ্গে জহুরুল হক হলের প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড আব্দুর রহিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে হাউজ টিউটরকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দেলোয়ারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। হলের সুন্দর পরিবেশকে যারা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের মাধ্যমে নষ্ট করতে চায়, আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো। যেনো পরবর্তীতে এমন ঘটনা কেউ ঘটাতে না পারেন।