জঙ্গলে নিয়ে জাবির নবীন শিক্ষার্থীদের ‘মুরগি’ বানালেন ওরা ১১ জন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এবার রাতের আঁধারে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে প্রথম বর্ষের (৫১ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৯ মে) দিবাগত রাত ১টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনী ফিল্ডের পেছনের জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ১১ শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের (৫০তম ব্যাচ) অভিযুক্ত ১১ জনের সবাই প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের নূর ইসলাম, মো. আবদুস ছবুর, প্রিন্স কুমার রায়, খন্দকার মোয়াজ ইসলাম, মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থী মিঠুন রায়, মো. তানভীর ইসলাম, চিরঞ্জীত মন্ডল, এ বি এম আব্দুল্লাহ আল কাফি, আহমেদ ইজাজুল হাসান আরিফ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী মো. রাসেল হোসাইন ও মো. জোবায়েদ হাসান।
এ ঘটনায় দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত ২৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন র্যাগিংয়ের শিকার আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান।
ঘটনার খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে, উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। তবে আব্দুল্লাহ আল কাফি নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ধরে ফেলেন। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি র্যাগিংয়ে জড়িত অন্য শিক্ষার্থীদের পরিচয় জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, রবিবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনী ফিল্ড এলাকায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকতে বলেন ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
নির্ধারিত সময়ে ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হলেও ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সেখানে আসেন রাত সাড়ে ১১টায়। পরে তারা ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সিডনী ফিল্ডের পেছনের জঙ্গলে গিয়ে নানা ধরনের মানসিক নির্যাতন করেন। এসময় তারা ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরকে ‘মুরগি বানিয়ে’, ‘চেয়ার বানিয়ে’ বিভিন্ন কায়দায় শাস্তি দেন। এছাড়া এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের দিকে জুতা ছুঁড়ে মারেন।
অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, রাতে ডিপার্টমেন্টের জুনিয়রদের ডাকা হয়েছিল। আমরা ৫০ ব্যাচের ১০ থেকে ১২ জন ছিলাম। এর মধ্যে নূর ইসলাম, তানভীর ইসলাম, মো. আবদুস ছবুর, প্রিন্স কুমার রায়, আহমেদ ইজাজুল হাসান আরিফ, চিরঞ্জীত মণ্ডল, মো. রাসেল হোসাইন, মো. সিজান, খন্দকার মোয়াজ ইসলাম, মিঠুন রায় উপস্থিত ছিল। এসময় তারা ওদেরকে র্যাগ দেয়, তবে আমি দিইনি। আমি ভুল স্বীকার করছি, এরকম আর হবে না।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলেন, রাত ৮টায় বড় ভাইয়েরা সিডনি ফিল্ডে আমাদের ডেকেছে বলে জানানো হয়। তবে ভাইয়েরা আসেন রাত ১১টায়। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো আমাদের র্যাগ দেওয়া হয়। আমাদেরকে বাবা-মা তুলে গালিগালাজ করেন। এছাড়া একজনের গায়ে জুতা ছুঁড়ে মারেন এবং কয়েকজনকে ‘মুরগি’ বানিয়ে শাস্তি দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ বলেন, রাতে খবর পাই যে সিডনি ফিল্ড সংলগ্ন জঙ্গলে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিং দেওয়া হচ্ছে। প্রক্টর স্যারের নির্দেশে আমরা ২ জন সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি ও আশ্বস্ত করেছি। তারা একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, রাতেই আমরা একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আজকেই অভিযুক্তদের শোকজ করা হয়েছে। র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। অভিযুক্তদের আমরা ইতোমধ্যে শোকজ করেছি। তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। এর আগেও যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো র্যাগিং চলবে না।