২৭ মে ২০২৩, ০৯:১২

রাশিয়াতে খেলতে যাচ্ছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা, সংশয় কেটেছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফেস্টিভ্যাল-২০২৩ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেয়োড়দের অংশগ্রহণ নিয়ে যে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছিল, সেটি আর থাকছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য ও শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের স্পোর্টস বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাশিয়ার মেইলের জবাব দেওয়া হয়েছে। তবে এখন কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে ছেলেরা আদৌও যেতে পারবেন কি-না।

ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফেস্টিভ্যাল রাশিয়ার একটি আঞ্চলিক ক্রীড়া ইভেন্ট। এটি দেশটির ইয়েকাতেরিনবার্গে শহরে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৯ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে এ ইভেন্টের। এতে বিশ্বের ২২টি দেশের ১৭ থেকে ২৩ বছর বয়সী ৪ হাজার ১শ জন ক্রীড়াবিদ ১৪টি খেলায় ১৯৩টি ইভেন্টে অংশ নেবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাবি খেলোয়াড়ারা এ টুর্নামেন্টের তিনটি ইভেন্টে অংশ নেবেন। এরমধ্যে রয়েছে সুইমিং, টেবিল টেনিস, ভলিবল। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়সহ ২৪ জনের টিমের কথা বলা হয়েছে। এ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে কোন ধরনের পয়সা খরচ করতে হবে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

জানতে চাইলে অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পরিচালক শাহজাহান বিষয়টি আমাকে অবহিত করেননি। হঠাৎ শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এলে আমি ঘটনাটি জানতে পেরে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করি। গতকাল (শুক্রবার) রাতেই ছিলো ফিরতি মেইল পাঠিয়ে নিশ্চিত করার শেষ দিন। তাই আমি রাতেই অফিস খুলে সকল ব্যবস্থা করে ফিরতি মেইল পাঠিয়ে ঢাবির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি।

কেন তিনি এত সুযোগ পাওয়ার পরেও শিক্ষার্থীদের হয়ে চিন্তা করলেন না! আমি সবসময়ই বলি হার-জিত বড় না, অংশগ্রহণ করতে পারাটাই বড় ব্যাপার। আবার রাশিয়ার মত দেশে গিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাটা আরও সম্মানের। শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এর আগে, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি এ ইভেন্টে অংশ নিতে ঢাবিকে ই-মেইলে জানায় আয়োজক কমিটি। তবে এ মেইলের কোন উত্তর দেয়টি ঢাবি। ফলে গত ২১ এপ্রিল ফের ই-মেইল পাঠায় ফেস্টিভ্যাল আয়োজক কমিটি। আগের মেইলে বিমান ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বহন করার কথা বলা হলেও এ মেইলে বিমান ভাড়া আয়োজক কমিটি বহন করবে বলে জানানো হয়। ফলে এতে অংশ নিতে ঢাবির আর খরচ বহন করতে হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: খেলাধুলা ও শরীরচর্চা মনের দরজা-জানালা খুলে দেয়: শিক্ষামন্ত্রী

অভিযোগ রয়েছে, এ ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়ার জন্য ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তথ্য জমা দিতে বলা হয়। এ মেইলের বিষয়ে শাহজাহান আলীকে অবগত করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায়াড়রা বিষয়টি জানতে পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শিক্ষার্থীদের কথা শুনে কোষাধ্যক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জানেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন।

রাশিয়া শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের উপদেষ্টা অধ্যাপক অসীম কুমার সরকারকে মার্ক করে এ মেইল পাঠিয়েছে। তারা যখন মেইল করে তখন উপদেষ্টা স্যার অসুস্থ ছিলেন। ফলে সময় মতো মেইলের রেসপন্স করার সুযোগ ছিলো না।

অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, এত বড় অন্যায় করার জন্য তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এ বিষয়ে আমরা কথা বলবো। ছেলেরা জিতুক বা হারুক; অন্তত তাদের সুযোগ তো দিতে হবে। কিন্তু তিনি গাফিলতি করে সবকিছু প্রায় নষ্ট করে দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার আমার থাকলে আমি অবশ্যই তা গ্রহণ করতাম।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালক মো. শাহজাহান আলী তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের উপদেষ্টা অধ্যাপক অসীম কুমার সরকারকে মার্ক করে এ মেইল পাঠিয়েছে। তারা যখন মেইল করে তখন উপদেষ্টা স্যার অসুস্থ ছিলেন। ফলে সময় মতো মেইলের রেসপন্স করার সুযোগ ছিলো না।

এতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল গতকাল শুক্রবার রাতে রাশিয়ার মেইলের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে সেটি কেটে বলে জানান পরিচালক মো. শাহজাহান আলী। তিনি বলেন, এখন আমরা রাশিয়ার ফিরতি মেইলের অপেক্ষায় রয়েছি। তাদের মেইলের উপর নির্ভর করবে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ। আগামী রবিবার এ বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। কে কে এ টিমের সঙ্গে যাবেন, তিন ক্যাটাগরিতে কারা কারা খেলবেন সেটিও ধীরে ধীরে চূড়ান্ত করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, গতকাল একটা নিউজে দেখে শাহজাহানকে ফোন করেছি। কেন তিনি এত সুযোগ পাওয়ার পরেও শিক্ষার্থীদের হয়ে চিন্তা করলেন না! আমি সবসময়ই বলি হার-জিত বড় না, অংশগ্রহণ করতে পারাটাই বড় ব্যাপার। আবার রাশিয়ার মত দেশে গিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাটা আরও সম্মানের। শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্বেও সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইলেন?