জাবির হলে রাতভর ‘মুরগি ভঙ্গিতে’ বসিয়ে রাখা হলো নবীন শিক্ষার্থীদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আল বেরুনী হলের গণরুমে থাকা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন ও র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই সময় অজ্ঞান ও অসুস্থ হয়েছেন প্রথম বর্ষের দুজন শিক্ষার্থী। একই সময়ে গণরুমে র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন প্রথম বর্ষের অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী। র‍্যাগিংয়ের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ ও শারীরিক হেনস্থা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৫মে) এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন র‍্যাগিংয়ের শিকার আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান। 

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী শেখ নাজমুস সাকিব, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী এনামুল হক লিমন, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের আশিক। তারা সবাই দ্বিতীয় বর্ষ (৫০ তম ব্যাচ) এবং আল বেরুনি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। এছাড়াও এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের কথাও অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে।

অভিযোগপত্রে ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছে, গত ২২ মে রাত ১২টার দিকে একই হলের ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা আমাদের গণরুমে আসেন। তারা মা-বাবা তুলে অকথ্য ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এসময় তারা আমাদের ’মুরগি ভঙ্গিতে’ অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলে আমাদের সাথে থাকা একজন শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে যান।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, একই সময় আরেকজন শিক্ষার্থী তীব্র রক্তচাপজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরেও তারা ক্ষান্ত হননি, অত্যন্ত নোংরা ও বিকৃত ভঙ্গিতে পর্ণোগ্রাফির মতো আচরণ ও অভিনয়ে বাধ্য করা হয়। এরপর রাত প্রায় ৪টার দিকে তারা গণ-রুম থেকে বেরিয়ে চলে যান।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান জানিয়েছেন, রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে ইমিডিয়েট কিছু সিনিয়ররা রুমে এসে হঠাৎ অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে শুরু করেন। পরে ম্যানার (আচরণ) শেখানোর নামে বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গিতে শারীরিক নির্যাতন করেন। এ নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে এসেছি। র‍্যাগিংয়ের শিকার হতে না। আমরা র‍্যাগিং এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে জিরো টলারেন্স দাবি করছি—যুক্ত করেন ভুক্তভোগী ফুয়াদ হাসান।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী শেখ নাজমুস সাকিব জানান, ঐদিন আমরা কয়েকজন গনরুমের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। প্রথম বর্ষের কিছু শিক্ষার্থী জোরে জোরে গান বাজাচ্ছিল। আমরা শুধুমাত্র উচ্চস্বরে গান বাজাতে মানা করার কথা বলতে গিয়েছিলাম। সেখানে র‍্যাগিং এর কোন ঘটনা ঘটেনি। 

এ বিষয়ে আল বেরুনি হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ পত্রের কপিটি মাত্রই পেয়েছি। আজ রাত ৯ টায় আমাদের হলের একটি মিটিং আছে সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা হবে। 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমি সন্ধ্যার সময় অভিযোগ পত্রটি পেয়েছি এবং উক্ত হলের প্রভোস্টকে অভিযোগ পত্রটি দিয়েছি এবং এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেছি।