ভর্তির সাত মাসেও আইডি কার্ড পায়নি রাবি শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সাত মাস পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র হাতে পাননি প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থী। তবে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক পরিচয়পত্র সাথে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমতাবস্থায় আতঙ্কে আছেন পরিচয়পত্রবিহীন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাত মাসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয়পত্র হাতে পাননি তারা। তার ওপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন কঠোর নির্দেশনা তাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্য সেবা, গ্রন্থাগার থেকে বই সংগ্রহ ও নিজের পরিচয় প্রদানের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। অনেক সময় তারা বিভিন্ন দপ্তর ও জরুরি কাজে হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তার প্রমাণ হল আইডি কার্ড। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে যদি কোনও সমস্যায় পড়ি সেখানে আমি আমার ছাত্রত্ব প্রমাণ করতে পারি না। এতদিনেও আইডি কার্ড না পাওয়া একজন শিক্ষার্থীর প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবহেলার বহিঃপ্রকাশ।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী আব্দুল্লাহ বলেন, আইডি কার্ড না থাকায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে কোনও বই নিতে পারি না। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু আইডি কার্ড না থাকায় আমরা এইসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
পরিচয়পত্র তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সেন্টার ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোলাবোরেশানের প্রধান অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্রটি চায়নার একটি কোম্পানি তৈরি করে থাকে। কিন্তু টেন্ডার সংক্রান্ত কিছু জটিলতায় কোম্পানিটি আইডি কার্ড তৈরি করতে সময় বেশি নিচ্ছে। আমরা আশা করছি ইদের ছুটির পরপরই শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র প্রদান করতে পারব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক সার্বক্ষণিক আইডি কার্ড সাথে রাখার প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আইসিটি দপ্তরকে জানিয়েছি যেন তারা দ্রুত শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড সরবরাহ করে। তবে নবীন শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের কিছু নেই। ভর্তির রশিদ বা একটি ডকুমেন্ট তারা আপাতত সাথে রাখুক। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা আইডি কার্ড সার্বক্ষণিক সাথে রাখার নির্দেশনা দিয়েছি।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে একটি পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রথম স্মার্ট আইডি কার্ডের ব্যবহার শুরু হয়। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ৩৯০টি কার্ড বিতরণের মাধ্যমে প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়। পরে ২০১২ সালের মাঝামাঝিতে হেকএক প্রজেক্টের আওতায় ৮০০০ সাদা কার্ড ক্রয় করা হয় এবং প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রায় দেড় হাজার কার্ড প্রদান করা হয়। বাকি ৬১১২টি সাদা কার্ড স্মার্ট আইডি কার্ড প্রকল্পে হস্তান্তর করা হয়।
এক পর্যায়ে প্রকল্পের সাব-প্রজেক্ট ম্যানেজার অধ্যাপক রকীব আহমেদ স্থায়ীভাবে কার্ডটি চালু করার জন্য প্রতিটি কার্ডের জন্য ৪০০ টাকা ফি গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব করেন। তখন থেকেই প্রতিটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় এককালীন ৪০০ টাকা গ্রহণ করা হতো।