ছয় বছরে ২ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পেয়েছে জাবি
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। শিক্ষা ও গবেষণায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে। তবে নানা জটিলতায় বর্তমানে বিদেশী শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত ছয় বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মাত্র ৩ জন বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বর্তমান অধ্যয়নরত আছে ২ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে মো. শামস তাবরীজ নামে একজন নেপালি শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তবে ভর্তির কয়েকদিন পর অজ্ঞাত কারণে তিনি অন্য দেশে চলে যান। এরপর ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি।
পরে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে মো. আবিদ হোসাইন নামে আরও একজন নেপালি ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে অ্যানি লস্কর নামে একজন ভারতীয় শিক্ষার্থী ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হয়। তবে এ্যানি লস্করের পরিবার বর্তমানে টাঙ্গাইলে বসবাস করেন। এরপরে এখন পর্যন্ত পরবর্তী শিক্ষা বছরগুলোতে আর কোনো বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি বলেই জানা যায়।
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অনেক পিছিয়ে। র্যাংকিংয়ে অগ্রগতির জন্য বিদেশি শিক্ষার্থী অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও পড়ালেখার মান কমে যাওয়া বিদেশী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ হারানোর কারণ।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বলে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণরুম সংস্কৃতি, শিক্ষার মান কমে যাওয়া, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা, বিদেশিদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ, ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতা, ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা, অনেক বিভাগে শুধু বাংলায় পাঠদান, সেশনজটসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়তে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: জাবি-ঢাবি-চবিকে পেছনে ফেলে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় বিজিসি ট্রাস্ট
ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার এ্যানি লস্করের সাথে দ্যা ডেইলি ক্যম্পাসের আলাপকালে তিনি বলেন, একজন বিদেশী শিক্ষার্থী হিসেবে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। তবে একাডেমিক কার্যক্রম, সেশনজট, বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান প্রচারণার বিষয়গুলোতে নজর দিলে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি আগ্রহ বাড়তে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও এখানে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। ফলে তারা এখানে পড়তে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ বিদেশি শিক্ষার্থীর সংকট কাটাতে পারে।
বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসুক এটা আমরা চাই। বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভর্তি করানো হয়।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থী কম ভর্তি হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রশাসনের উদাসীনতা। প্রশাসন চাইলেই বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট আকর্ষণীয় করাসহ ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতা কমাতে পারে।
তিনি বলেন, বিশ্ব র্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অনেক পিছিয়ে। র্যাংকিংয়ে অগ্রগতির জন্য বিদেশি শিক্ষার্থী অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও পড়ালেখার মান কমে যাওয়া বিদেশী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ হারানোর কারণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য একটা পলিসি থাকা দরকার। যেটা ওয়েবসাইটে আপডেট করতে হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে পরিকল্পনা নেই। বিদেশি শিক্ষার্থীরা তখন আসবে, যখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসুক এটা আমরা চাই। বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভর্তি করানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা তুলে ধরে অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, আমাদের এখন ভালো মানের আবাসিক হল ও কোয়ার্টার রয়েছে। এছাড়া বিদেশী শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করতে ওয়েবসাইট আপডেটসহ সব রকমের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।