১০ মে ২০২৩, ২১:২৪

এক চোখের দৃষ্টি চিরতরে হারালেন আলিম, ঝাপসা দেখছেন মিসবাহ

আলিমুল ইসলাম ও মিসবাহুল ইসলাম  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন শতাধিক আহতদের মধ্যে পুলিশের ছররা গুলিতে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হন তিন শিক্ষার্থী। ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসার পরও এক চোখের দৃষ্টি চিরতরে হারিয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আলিমুল ইসলাম। আর ফারসি বিভাগের শিক্ষার্থী মিসবাহুল ইসলাম অপারেশনের পর চোখে ঝাপসা দেখছেন। তাছাড়া অর্থাভাবে ভারতে চিকিৎসা নিতে পারছেন না আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন হোসেন।

ভুক্তভোগীদের দাবি, এখন পর্যন্ত তারা কেউ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তাদের প্রতি আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি প্রশাসনের নেই। চিকিৎসার পর কাগজপত্র জমা দিলে অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করা হবে। 

ভুক্তভোগী ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় বিনোদপুর বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকা। প্রায় ৫ ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষে অন্তত দুই শতাধিক আহত হন। এসময় চোখে আঘাত পায় আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন, ফারসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মিসবাহুল ইসলাম এবং মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আলিমুল ইসলাম।

পরে তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে তাদের ভারতের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে মিসবাহুল ইসলাম ও আলিমুল ইতোমধ্যে শঙ্কর নেত্রালয় থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন কিন্তু আল-আমিন এখনো অর্থাভাবে যেতে পারেননি বলে জানা গেছে।

ভারতে চিকিৎসার পরেও বাঁ চোখ বাঁচানো যায়নি মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আলিমুল ইসলামের। তিনি বলেন, আমি গত ১৭ এপ্রিল ভারতের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে যাই। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে আসি ২৪ এপ্রিল। খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখের মতো। কিন্তু আমার চোখ ঠিক হয়নি। বাঁ চোখটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা দিলে তিনি তা নেবেন না।

ফারসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিসবাহুল ইসলাম চেন্নাইয়ে অপারেশনের পর চোখে ঝাপসা দেখছেন। তিনি বলেন, আমি গত ৩১ মার্চ চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে যাওয়ার পর আমার ডান চোখে অপারেশন চলে। অপারেশনে প্রায় তিন লাখ ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অপারেশন শেষে ২১ এপ্রিল দেশে আসি। অপারেশনের পর চোখে এক ধরনের জেল দিয়েছে, এ জন্য সব কিছু ঝাপসা লাগছে। আবার ২৯ মে যাওয়া লাগবে। তারপর আরো একবার যেতে হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ধরনের সহায়তা এখন পর্যন্ত পাইনি। ভিসি (উপাচার্য) স্যার আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি জানাইয়ো তোমার কত টাকা খরচপাতি হয়, কিন্তু আমি তাকে এসএমএস দিয়েই গেছি, তিনি সিন (দেখা) করেছেন; কিন্তু রেসপন্স (প্রতিক্রিয়া) করেননি।

এখনো অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে ভারতে যেতে পারেননি আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন। বর্তমানে তিনি ডান চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না।

আল-আমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, চিকিৎসা নেওয়ার পর কাগজপত্র জমা দিলে টাকা দেবেন, কিন্তু ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করার মতো টাকা আমার পরিবারের নেই। আমার বাবা একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তিনি এত টাকা ম্যানেজ করতে পারবেন না। ভারতে যাব কীভাবে? ইতোমধ্যে আমার সহপাঠীরা বিভিন্ন হলে গিয়ে টাকা তোলা শুরু করেছে। কিন্তু তাতে কতই বা টাকা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমার পাসপোর্ট হয়ে গেছে, ভিসার আবেদন করেছি। মিসবাহুল ভাই ও আলিমুল ইতোমধ্যে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু আমি করতে পারিনি। এমতাবস্থায় আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, ভারত ফেরত দুজনের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী আমার সাথে দেখা করেছে। দুইদিন তার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি তাকে আবেদন করতে বলেছি। সে ইন্সুরেন্সের মাধ্যমে তো আর্থিক সহযোগিতা পাবে। সাথে প্রশাসন থেকেও সহযোগিতা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আজকে আমাদের কাছে আসার কথা থাকলেও সে আসেনি। আর আলামিন নিজেই দেরি করে ফেলেছে। আমি তাকে বলেছি, তোমাকে আরো আগে আসা উচিত ছিলো। তুমি তো নিজেকে ক্ষতি করছো।' তাদের বিষয়ে প্রশাসন খুবই আন্তরিক। সার্বিক সহযোগিতায় প্রশাসন তাদের পাশে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আল-আমিন নামের ওই শিক্ষার্থী বিভাগের সভাপতিকে নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। তাদেরকে যেহেতু কথা দেওয়া হয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে। তবে বিষয়টি প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টার দপ্তর দেখভাল করছে। তাদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে জানাচ্ছি।