দেশের ইন্টার্নে আগ্রহ চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশিদের, না বিএমডিসির
বিগত ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের বাইরে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থীদের সুযোগ ছিল দেশে ইন্টার্নশিপ (পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত থাকা) করার। ২০১৮ সালে এ সুযোগ বন্ধ করে নীতিমালা প্রকাশ করে দেশের চিকিৎসা শিক্ষার অন্যতম তদারক সংস্থা বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। ফলে বাধ্য হয়েই বিদেশে ইন্টার্ন করতে হচ্ছে দেশে ফিরতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের।
দীর্ঘদিন তাদের এ দাবি থাকলেও মেডিকেলে ভর্তিতে ২০২৩ সালের পরিবর্তিত নীতিমালা প্রকাশের পর আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিদেশে বাধ্যতামূলক এমবিবিএস কোর্স শেষ সম্পন্ন করার পর তাদের সুযোগ দেওয়া হোক দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন সম্পন্ন করার। তবে, বিএমডিসি বলছে, এ নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত বদলানোর আপাতত কোনো চিন্তা নেই।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে চীনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিদেশে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর দেশে ইন্টার্ন সম্পন্নের নিয়মটি পুনরায় চালু করার জন্য বিএমডিসির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। কেননা এতে বিদেশে বিশেষ করে চীনে পড়তে আসাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে; এর মধ্যে ভাষা এবং আর্থিক বিষয়টি বিবেচনায় আনা উচিৎ।
তাদের মতে, চীনে ৫ বছর পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে এসে ইন্টার্নি করতে পারলে আমাদের জন্য ভালো হতো; কারণ আমরা পরবর্তীতে বাংলাদেশে অনুশীলন করব। সেজন্য বাংলা ভাষায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হবে, সেহেতু আমাদের দেশে ইন্টার্ন করার সুযোগ না দিলে এ নিয়ে সীমাবদ্ধতা থেকে যাবে। দ্বিতীয়ত, এক বছর চীনে ইন্টার্নি করে আমাদের চায়নিজে গুরুত্ব দিতে হয়; ফলে বাংলাদেশে এসে আমদের পিছিয়ে পড়তে হয়।
এছাড়াও তাদের দাবি, আমরা চীনে ইন্টার্নি করলে আমাদের সেখানে এক বছরের টিউশন ফি দিয়ে পড়তে হয়। এতে বেশি লাভবান হচ্ছে চীন। আমরা যদি বাংলাদেশে ইন্টার্নি করতে পারি তাহলে আমাদের যে টাকা দিয়ে চীনে ইন্টার্নি করতে হচ্ছে তার চেয়ে কম টাকায় বাংলাদেশে ইন্টার্নি করতে পারব এবং সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের টাকা দেশেই থাকবে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের এমবিবিএস পাঠ শেষে ইন্টার্নশিপ (শিক্ষানবিশ) করলেও বিদেশি শিক্ষার্থীরা এ দেশে প্রাকটিস করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। তারা জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আগত এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস পাঠ শেষ করে ইন্টার্নশিপসহ মোট ছয় বছরের কোর্স সম্পন্ন করেন। ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএমডিসি তাদের রেজিস্ট্রেশন প্রদান করেন কিন্তু তাদের বাংলাদেশে প্র্যাকটিস করার অনুমতি নেই। এটি তাদের প্রদান করা নিবন্ধন সনদে উল্লেখ রয়েছে।
এ অবস্থায় কাউন্সিলের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিদেশি মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটদের বাংলাদেশে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার বা প্র্যাকটিস করার কোনো অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষার এ তদারক সংস্থাটি।
এ নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, দেশের স্বাস্থ্যশিক্ষার উন্নয়নের জন্যই এটি বন্ধ করা হয়েছিল; আপাতত এটি পুনরায় চালু করার কোনো সুযোগ নেই। তবে, মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর সেখানে পাশ করার সাটিফিকেট এবং দেশের পরীক্ষায় পাশ করার পরই বিদেশে এমবিবিএস করা শিক্ষার্থীরা দেশে প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাবেন; ইন্টার্নশিপের নয়।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর দেশে থেকে প্রায় ৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী বিদেশে চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য যায়। এরমধ্যে প্রতি বছর শুধুমাত্র চীনেই পড়তে যাচ্ছে মেডিকেলে প্রায় ৫শতাধিক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে ড্রাগনের দেশটিতে অধ্যয়নরত রয়েছেন বাংলাদেশের ৩ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। যারা স্বাস্থ্যশিক্ষার ওপর উচ্চশিক্ষার জন্য সেখানে অবস্থান করছেন এবং তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। চীনে বর্তমানে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর তাদের একবছরে অতিরিক্ত ইন্টার্ন করতে দেশি শিক্ষার্থীদের খরচ করতে হচ্ছে প্রায় আড়াই থেকে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি অর্থ।