১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২৬

জাবিতে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ নিয়ে অংশীজনদের বিভক্তি

  © টিডিসি ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ১৩৭ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রশাসনিক ভবন নির্মান নিয়ে বিভক্তি তৈরি হয়েছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের মাঝে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বাজেটের এ প্রকল্পের আওতায় দশতলা বিশিষ্ট একটি নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করার চুক্তি হয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা স্থগিত করার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বিভক্ত মত প্রকাশ করেছেন অংশীজনরা।

এর আগে গত বছর ১৩ নভেম্বর উপাচার্য বরাবর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দশতলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছে অফিসার সমিতি। এতে বলা হয়, গত ৮ জুন উপাচার্য কর্তৃক উদ্বোধনকৃত দশতলা প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর আগের তুলনায় অনেক বিস্তৃত হওয়ায় সে অনুপাতে কর্মকর্তাদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থান সংকুলানের অভাবে একই কক্ষে অনেক কর্মকর্তা গাদাগাদি করে একত্রে কাজ করছে। ফলে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই কর্মকর্তাদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য অনুমোদিত দশতলা প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করার অনুরোধ জানানো হয়।

অফিসার সমিতির সভাপতি মো. আজিম উদ্দীন বলেন, অফিসে কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট ডেস্ক নাই, বসার জায়গা নাই। সবাইকে একসাথে গাঁদাগাদি করে বসে কাজ করতে হয়। আমাদের জায়গা সংকুলানের জন্যই আমরা মাননীয় উপাচার্যকে নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পক্ষে পত্র দিয়েছি।

এদিকে, গত ৪ এপ্রিল অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। সেখানে দুটি প্রশাসনিক ভবন থাকার পরও নতুন আরেকটি প্রশাসনিক ভবন না করার দাবি জানানো হয়।

তাদের দাবি আগের পাঁচতলা প্রশাসনিক ভবনটি সম্প্রসারণ করলে ব্যয় হবে ৪০ কোটি টাকা। তাই আরেকটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অপচয় হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, শুনেছি বর্তমান রেজিস্ট্রার ভবনটি পূর্ণাঙ্গ করতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তাহলে কেন কর্মকর্তাদের জায়গার সংকট কাটাতে ১৩৭ কোটি টাকা দিয়ে নতুন রেজিস্ট্রার ভবন করতে হবে? আমরা বহুবার বলে এসেছি প্রশাসনিক কাজে সমন্বয়হীনতা এড়াতে অটোমেশন এর আওতায় নিয়ে আসা হোক। এতদিন হয়ে গেলেও সে অটোমেশন আমরা দেখতে পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন হোক সেটা আমরা অবশ্যই চাই, কিন্তু সেটা সু-পরিকল্পিতভাবে  করার দাবি জানাই।

এবিষয়ে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য  শিক্ষার্থীদের সকল সুযোগ- সুবিধা অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিশ্চিত করা। তাই শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসনে একাডেমিক ভবন নির্মাণ যেমন প্রয়োজন তেমনি শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কাজ করেন তাদের কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদনের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। সেজন্য একডেমিক ভবনের পাশাপাশি নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন বলেন, আমরা শিক্ষক সমিতি থেকে মাস দুয়েক আগেও একাডেমিক ভবনগুলো আগে করার জন্য লিখিত পত্র দিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা নিয়ে কি ভাবছে তা এখনও পরিষ্কার করেনি। আমার নিজ বিভাগেও প্রতি বছর ৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। যেখানে ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৪০ জন। ফলে আমরা অনেক সময় ক্লাস প্র্যাকটিক্যাল নিতে পারি না। এই সমস্যা উত্তরণে আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পক্ষকেই একাডেমিক ভবন নির্মাণে অগ্রাধিকারের পক্ষে দাবী জানানো উচিৎ।

নতুন প্রশাসানিক ভবন নির্মিত হলে পুরাতন ভবনের কি হবে এই প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান প্রশাসনিক ভবনের পাশেই কলা ও মানবিকী অনুষদ সম্প্রসারণ করা হবে। তখন সম্প্রসারিত ভবন এবং বর্তমান প্রশাসনিক ভবন দুটিতেই পাঠদান কার্যক্রম চলবে।

বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক বশির আহমেদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোগত দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবনের কমতি আছে। তবে শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই নতুন প্রশাসনিক ভবনটি নির্মান করা হবে। ভবনটি প্রশাসানিক কাজের পাশাপাশি একাডেমিক কাজেও ব্যবহার করা হবে। এখানে ছোট বড় অনেক হল রুম, সেমিনার রুমও থাকবে। এতে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই উপকৃত হবেন। তাই এই ভবন না হওয়ার পেছনে কোনো কারণ দেখছি না। এছাড়া, এই ভবনের জন্য নির্ধারিত বাজেটের টাকা অন্য খাতে ব্যায় করারও কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।