রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোকবর্তিকা ‘ইচ্ছে’
নিজেদের মেধা ও শ্রম দিয়ে যে অর্থ উপার্জন করেন তার পুরোটাই ব্যয় করেন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য; তার জন্য কখনো কারো কাছ থেকে কোনো দান কিংবা চাঁদা গ্রহণ করেন না। নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কাজ করছে ‘ইচ্ছে’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। সংগঠনটি পরিচালনা এবং সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন রাবির একদল শিক্ষার্থী।
‘ইচ্ছে’ একটি ব্যতিক্রমধর্মী সমাজসেবামূলক সংগঠন। ‘শ্রম দেই, মেধা দেই, আর্ত-মানবতার সেবা করি এবং পৃথিবী বদলে দেই-এমন প্রতিপাদ্যে ২০১২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কিছু শিক্ষার্থীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংগঠনটি। ‘ইচ্ছে’ মূলত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে নিয়েই কাজ করে; পাশাপাশি তারা বয়স্কদের শিক্ষাদান কর্মসূচিও পরিচালনা করে থাকে।
মূলত, ইচ্ছেডানাদের (ইচ্ছের সদস্যদের) উপার্জিত অর্থ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সমস্ত শিক্ষার ব্যয়ভার, পোশাক, খাদ্যসামগ্রী ও তাদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে ব্যয় করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সংগঠনটির উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ইফতার সামগ্রী ও ঈদ বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে খামারবাড়ি সংলগ্ন ইচ্ছে’র স্কুলে এই উপহার সামগ্রী বিতরণ করে সংগঠনটির সদস্যরা।
এসব নিয়ে সংগঠনটির সভাপতি মো. সাকিল জানান, ইচ্ছে একটি ব্যতিক্রমধর্মী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমরা নিজেদের মেধা ও শ্রম দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে শিক্ষাদান, শিক্ষা-উপকরণ, পোশাকসহ যাবতীয় খরচ প্রদান করি। ক্যাম্পাসের আশেপাশের শিশুদের নিয়ে আমাদের প্রাথমিক পথচলা শুরু হয়। এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল যে, সমাজে যারা সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে তাদের মুখে হাসি ফোটানো। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে হাসি ফোটানোর মধ্যে একটা আলাদা তৃপ্তি রয়েছে।
আরও পড়ুন: ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে হেইলিবারি
‘ইচ্ছে’ ব্যতিক্রমধর্মী সংগঠন কেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কারণ এখানে যারা ইচ্ছের সদস্য আছে তারা নিজেরাই নিজেদের শ্রম দেয়, মেধা দেয়, আর্ত-মানবতার সেবা করে এবং সুবিধাবঞ্চিতদের শিক্ষা দেয়। বাংলাদেশে এমন সংগঠন খুবই কম। ইচ্ছে আরও ব্যতিক্রম এই কারণে যে, ইচ্ছে সংগঠন কারো কাছ থেকে কোনো প্রকার চাঁদা কিংবা অনুদান গ্রহণ করেন না।
‘ইচ্ছে’র আয়ের উৎস সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেমন (১৪ ফেব্রুয়ারি, পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখে) ক্যাম্পাসে ফুলের স্টল বসিয়ে থাকি। সেখান থেকে একটা মোটা অংকের লভ্যাংশ আসে। আবার আমরা ২১শে ফেব্রুয়ারি কিংবা ২৬শে মার্চে আলপনা করে থাকি। অনেকেই আমাদের মাধ্যমে আলপনা করিয়ে নেয় এবং খুশি হয়ে তারা কিছু টাকা দেয়। তা থেকে আমাদের ভালো অর্থ উপার্জন হয়। আবার প্রতিমাসে ইচ্ছে'র সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিক্রি করে। ওখান থেকে যে অর্থ আসে তা দিয়ে শিশুদের লেখাপড়ার খরচ বহন করা হয়। এককথায় আমাদের এসব খাতের লভ্যাংশ পুরোটাই সুবিধাবঞ্চিতদের পিছনে ব্যয় করা হয়।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ইচ্ছে’র একটি স্কুল রয়েছে। যেটা ইচ্ছেডানারা (ইচ্ছের সদস্যরা) পরিচালনা করেন। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খুঁজে এনে তাদেরকে পড়ানো হয়। বর্তমানে স্কুলে শিক্ষার্থী আছে মোট ২০ জন। আগে সপ্তাহে প্রতিদিনই পড়ানো হতো। কিন্তু এখন শুক্র ও শনিবার পড়ানো হয়। তাদের যাবতীয় ব্যয়ভার সংগঠনই বহন করে।
যদি কোনো দাতা ব্যক্তি এগিয়ে আসে ইচ্ছে'র সহযোগিতার জন্যে তাহলে আপনারা সেটা গ্রহণ করবেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিল বলেন, আমরা সাধারণত এধরনের সহযোগিতা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করি। কারণ আমাদের সংগঠনের সংবিধানেও এটা লেখা আছে যে আপনি যদি ইচ্ছে'কে টাকা বা অন্য কোনো সহযোগিতা দিতে চান তাহলে আগে আপনাকে সদস্য হতে হবে। সদস্য হওয়ার পরেই আপনি সহযোগিতা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কেউ যদি আমাদের সহযোগিতা করতে চায় তাহলে আগে সদস্য ফর্ম পূরণ করে আমাদের সদস্য হতে হবে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজের পাশাপাশি তাদের বয়স্কদের শিক্ষাদান কর্মসূচি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার পর থেকে তার কার্যক্রম বন্ধ আছে। আমরা আবার রমযানের পর বয়স্কদের শিক্ষাদান কর্মসূচিটা চালু করবো। এছাড়াও ইচ্ছে রক্তদান কর্মসূচিও পরিচালনা করে থাকে। আমাদের একটা ইচ্ছেডানা নামের ফেসবুক গ্রুপ আছে। যদি কারো রক্তের প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদেরকে মেসেজ করলে ইচ্ছেডানার সদস্যরা রক্ত দিয়ে থাকে।