নৃগোষ্ঠীদের সামাজিক উৎসবে ঢাবির পরীক্ষা ও ক্লাস শিথিলের দাবি
নৃগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বিষ্ণু, বিহু, বৈসু, সাংগ্রাই, চাংক্রানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) চলমান শিক্ষাবর্ষে বাংলা নববর্ষের আগে ও পরে দুইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল পরীক্ষা স্থগিত ও ক্লাস শিথিলের দাবি জানিয়েছে জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ নামের একটি সংগঠন।
সোমবার (১০ এপ্রিল) তারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দপ্তরে গিয়ে তার হাতে দাবি সংবলিত স্মারকলিপি তুলে দেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বসবাস করে। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থা রয়েছে। তার মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পূর্বের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৪টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বসবাস করে থাকে। বাংলা বর্ষের চৈত্রসংক্রান্তি এবং নববর্ষ বরণকেন্দ্রিক আমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব উদ্যাপিত হয়। একেক জনগোষ্ঠীর কাছে এটি একেক নামে পরিচিত ও একেক জনগোষ্ঠীর উদ্যাপনের ধরনও একেক রকম। চাকমারা এটিকে বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষ্ণু, অহমিয়ারা বিহু এবং ম্রোরা সাংক্রান নামে এই উৎসবটি স্বকীয় সাংস্কৃতিক আয়োজনে উদ্যাপন করে থাকেন। কিন্তু এ সময়ে আমাদের নিজ প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলমান। কয়েকটি বিভাগ-ইনস্টিটিউটে (স্বাস্থ্য অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, শিক্ষা ও গবেষণা, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ইংরেজি এবং ফলিত গণিত) উৎসবের দিন পরীক্ষা থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক আদিবাসী শিক্ষার্থীই তাঁদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক উদ্যাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ছাত্রীর সাথে চ্যাট ফেসবুকে দিয়ে বহিষ্কার ছাত্রলীগ নেতা
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, নির্বিঘ্নে উৎসব উদ্যাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ তার প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রধান উৎসবের দিনগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির দাবি জানিয়ে আসছে।
গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে বিজু-বিষু-বিহু-বৈসু-সাংগ্রাই-সাংক্রানকেন্দ্রিক একটি ভিন্নধর্মী আয়োজন করে। ওই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রধান সামাজিক উৎসবের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা শিথিল রাখার আশ্বাস দেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, এ বছর পাহাড়িদের বৃহৎ সামাজিক উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করতে হবে ও ক্লাস শিথিল রাখতে হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ওই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা বন্ধ ও ক্লাস শিথিল রাখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের সকল জনগোষ্ঠী, নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেন পালন করতে পারে সেজন্য সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে সেটি আনন্দের হবে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে উৎসবের তারিখগুলোর আগে-পরে পরীক্ষা সমন্বয়ের অনুরোধ করেছি। তবে সময়টা নিকটে হওয়ায় পরিবর্তন করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। তারপরও দেখা যাক।