০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৯

জবির জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের আচরণে স্তম্ভিত সবাই

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

সমন্বিত গুচ্ছ পরীক্ষার পক্ষে মত দেয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক অধ্যাপককে মারধরের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে। এমন ঘটনায় স্তম্ভিত সবাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারা এমন কর্মকাণ্ড কোনভাবেই কাম্য নয় দাবি করে সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেন অনেকে। শিক্ষকরাই যদি এমন কর্মকাণ্ড করেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের কী শিখাবেন- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার পেছনে যারা আছেন, তাদেরকেও চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল সভায় ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কাদেরকে মারধরের ঘটনা ঘটে। তারই সহকর্মীরা এতে জড়িত ছিলেন।

জানা গেছে, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সভায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া এবং কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল কাদের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় থাকার পক্ষে মতামত দেয় এবং গুচ্ছে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ভর্তি কমিটি গঠন করা হবে কেন, এ প্রশ্ন তোলেন।

এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বাকবিতণ্ডা শুরু করে। একপর্যায়ে অধ্যাপক আব্দুল কাদেরকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক আবুল হোসেন, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজুল ইসলাম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আকরাম উজ্জামানসহ কয়েকজন মিলে অপর পাশ থেকে উঠে গিয়ে মারধর করেন।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারার তাদের শান্ত করতে গিয়েও ব্যর্থ হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, স্বাধীন মতামত দেওয়ার অধিকার সবারই আছে। তবে আমি যেহেতু উপস্থিত ছিলাম না সভায় ঘটনা পুরোপুরি জানি না। তবে সংবাদ মাধ্যমে যা জানতে পেরেছি, শিক্ষকদের এমন আচরণ কাম্য নয়। শিক্ষকদের জন্য এমন ঘটনা মানানসই না। জাতির কাছে শিক্ষকদের নিয়ে ভুল বার্তা যায়। এরকম আচার-আচরণ আমাদের বর্জন করা উচিৎ।

সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ঘটনার বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে গায়েব হওয়া সিসিটিভি ফুটেজ কিভাবে হারালো, এ বিষয়টির তদন্ত আগে হওয়া উচিৎ। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার পেছনে যারা আছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।

আরও পড়ুন: হঠাৎ স্থগিত জবির সিন্ডিকেট সভা, আলোচনায় ভর্তি পরীক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস.এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে যে ঘটনা ঘটেছিল, তা ওখানেই শেষ হওয়া উচিৎ ছিল। কারণ অধ্যাপক আব্দুল কাদের ও ঘটনায় সম্পর্কিত অন্যরা সবাই তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং সভায় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন সবাইকে। তবে শিক্ষকদের শিক্ষক সুলভ আচরণ আরো সুন্দর ও পরিমার্জিত হওয়া উচিৎ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের  সহকারী অধ্যাপক আবু সালেহ সেকেন্দার এ ঘটনার বিচার দাবি করে তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, একজন ডিন এবং শিক্ষক সমিতির নেতা আমাদের একজন প্রিয় সহকর্মীর গায়ে হাত তুলেছেন। ঘটনার নিন্দা জানাই এবং ডিনসহ অভিযুক্তদের শাস্তি চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা করি ডিনকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেবেন। কারণ তার দায়িত্ব শিক্ষকের গায়ে হাত দেওয়া নয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইন বলেন, ঘটনার সময় তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত ছিলাম না। তবে যতটুকই শুনেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে এমন আচরণ কাম্য নয়। শিক্ষকরা আমাদের অভিভাবক। তাদেরকে আরো মার্জিত হওয়া দরকার। 

সিসি টিভি ফুটেজ গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আইটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য বলেন, হার্ডডিস্ক পাওয়া যাচ্ছিল না। হারিয়ে গেল কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না হার্ডডিস্ক আছে। কিন্তু কম্পিউটারে সাপোর্ট করে, আবার করে না। অনেক আগে থেকেই সমস্যা। এ সময় 'সব ফুটেজ আছে কিন্তু শিক্ষক লাঞ্চিতের ওই ২ মিনিটের ফুটেজ কোথায় গেল'- প্রশ্ন করা হলে আইটি পরিচালক ফোন কেটে দেন।

ঘটনার দিন এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অধিকাংশ শিক্ষকদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতেই গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেখানে অধ্যাপক আব্দুল কাদের গুচ্ছের পক্ষ নিয়ে সিনিয়র শিক্ষকের সামনে টেবিল চাপড়িয়ে  উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তখন কয়েকজন শিক্ষক শান্ত করার চেষ্টা করেন তাকে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, যাই ঘটেছে তা শিক্ষকদের কাছ থেকে কখনই কাম্য নয় এবং শিক্ষকসুলভ আচরণও না। সভায় একজন সদস্য হিসেবে পক্ষে বিপক্ষে সবার কথা বলার অধিকার আছে। 

তিনি আরো বলেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে আমাদের সামনে এমন একটা ঘটনা ঘটবে তা কাম্য ছিল না। শিক্ষকদের এমন ঘটনা দেখার জন্য প্রস্তত ছিলাম না। এ জন্য আমি লজ্জিত, মর্মাহত।