এবার প্রথম আলোর সেই প্রতিবেদনের নিন্দা জাবির বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের
স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত প্রথম আলো পত্রিকার সেই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ। সোমবার (৩ এপ্রিল) সংগঠনটির সদস্য সচিব অধ্যাপক বশির আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা সাংবাদিকতার দ্বায়িত্বশীলতা উপেক্ষা করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে রাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে একটি শিশুর ছবির সঙ্গে ভিন্ন একজনের বক্তব্য সংযোজন করে ফটোকার্ড এর মাধ্যমে খাদ্য সংকটের কৃত্রিম চিত্র অঙ্কিত করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে নেতিবাচক ভাবে প্রদর্শন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রচারিত সংবাদটিকে ষড়যন্ত্রমূলক এবং সাংবাদিকতার নীতি পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। উল্লেখিত প্রতিবেদনটিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রেক্ষাপটে একজন শিশুর ছবি ছাপা হয় এবং এর নিচে ক্যাপশন হিসেবে একজন দিনমজুরের বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। ক্যাপশনে উল্লেখিত বক্তব্যে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাকে স্পষ্টত উপহাস করা হয়েছে এবং একটি শিশুর দারিদ্রতা ও অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, শিশুটির অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে উৎকোচের বিনিময়ে ছবিটি তোলা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সুযোগ নিয়ে বানোয়াট ছবি ও উদ্ধৃতির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে রাষ্ট্রিয় ব্যর্থতার ছবি অঙ্কন করতে গিয়ে যেভাবে রাষ্ট্র ও স্বাধীনতাকে অপদস্থ করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে নাশকতা সৃষ্টি এবং ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে সংবাদটি প্রচার করা দাবি করে এ ধরণের প্রতিবেদন রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণার জন্ম দিয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। এ প্রতিবেদনকে বাসন্তীকান্ডের সঙ্গেও তুলনা করা হয়। ২০০৭ সালে সামরিক স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে দেশকে রাজনীতিশূণ্য করার পায়তারা হাতে নিয়েছিলোও বলেও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে সংগঠনটি।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী সহ দেশের সকল নাগরিকের প্রতি এ ধরনের সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে প্রথম আলো সহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবিও জানিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে সংবাদ প্রকাশের জেরে বুধবার (২৯ মার্চ) রাতে দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার শামসুজ্জামানের নাম উল্লেখ করে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন আব্দুল মালেক ওরফে মশিউর মালেক নামে এক ব্যক্তি।
একই দিন গভীর রাতে তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন ঢাকা মহানগর উত্তর ১১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া। এতে আসামি করা হয় প্রথম আলো সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামানকে।
এখন পর্যন্ত এ মামলায় আটক আদালতের মাধ্যমে প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার শামসুজ্জামান শামসকে জামিন দেয়া হয়েছে এবং এ ঘটনায় ছয় সপ্তাহের আগাম জামিনে রয়েছেন দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। এছাড়াও মামলার পরদিন দিনভর পুলিশি প্রহরা ছিল দেশের শীর্ষ জাতীয় দৈনিকটির কার্যালয়ে সামনে।