রমজান মাসেও ক্ষুদার্ত পশুপাখিদের খাবার দিচ্ছেন রাবির গাজীউল

পশুপাখিদের খাবার দিচ্ছেন রাবির গাজীউল
পশুপাখিদের খাবার দিচ্ছেন রাবির গাজীউল  © টিডিসি ফটো

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনগুলো দুপুরে বন্ধ রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ক্যাম্পাসের কুকুর-বিড়ালগুলো। না খেয়ে বুক পীঠ একাকার এসব পশুপাখিগুলোর। তবে তাদের ক্ষুধা কিছুটা লাঘবের জন্য নিজ অর্থায়নে রান্না করে খাওয়ান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক (টিএসসি) কেন্দ্রের উচ্চমান সহকারী কর্মচারী গাজীউল ইসলাম।

চৌদ্দ বছর যাবত নিজের অর্থায়নেই পশুপাখির সেবা করে যাচ্ছেন এ পশু প্রেমী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের সেবা করে যাবেন বলেও ব্রত গ্রহণ করেছেন তিনি। 

গাজীউলের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৪ বছর আগে ২০০৮ সালে নিজের অর্থায়নের মানবিক জায়গা থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পশুপাখির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। খাওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে প্রায় বেতনের একতৃতীয়াংশ টাকা পশুপাখির পিছনে চলে যায়।

প্রতিদিন সকলের একটা অংশ কাটে পশুপাখির সাথে। কুকুর ও বিড়ালের ভাষাও বুঝতে বাকি নেই তার। প্রথমে নিজ অর্থায়নে শুরু করলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়ান।

পশুপাখির মধ্যে রয়েছে কুকুর, বিড়াল, শালিক, কবুতর। রাবি ক্যাম্পাসে ৬০টির মতো কুকুর ও ১২টির মতো বিড়াল আছে। গাজীউলের বাসায় আরও ১৪টি কুকুর ও ১৫০টির মতো কবুতর আছে। ক্যাম্পাসে কিছু শালিক পাখিও রয়েছে তার।

50354a99-4dab-41af-b15f-ecfb80d66872

তিনি জানান, রমজান মাস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কুকুর-বিড়াল না খেয়ে মরতে বসেছে। তাই সকালে রান্না করে তাদেরকে খুঁজে খুঁজে খাবার দিচ্ছি।

হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে বঞ্চিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপাখিগুলো। হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন মালিকরা উচ্ছিষ্ট খাবারগুলো পশুপাখিকে না দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেন। ফলে উচ্ছিষ্ট খাবার থেকেও বঞ্চিত হয় এসব পশুপাখি। এরাও আমাদের সমাজের অংশ এটা অনেকেই ভুলে যায়।

গাজীউল আরও বলেন, পশু-পাখির প্রতি মমত্ববোধের জায়গা থেকেই এই কাজ করছি। তাদের সাথে আমার এক সখ্যতা গড়ে উঠেছে। আমার গাড়ি যেতে দেখলেই গাড়ির পিছন পিছন দৌড়াতে থাকে তারা। মাঝে মাঝে আমাকে না পেয়ে আমার গাড়ির পাশে বসে থাকে। আমার এ কাজে অনেকেই সহযোগিতার হাতে বাড়িয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, গত বছর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার পশুপাখিদের প্রতি ভালোবেসে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন আমাকে। প্রয়োজন হলে আরও সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্তও করেছিলেন। অসহায় এ প্রাণীকুল রক্ষায় আমরা সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসি তাহলে পশুপাখিরাও নিরাপদে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারবে। পশুপাখিদের সহযোগিতা করতে সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান এ উচ্চমান সহকারী কর্মচারী।

b7e4839c-6391-4694-99f5-e095e7a71df8

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, পশুপাখিগুলো আমাদের ক্যাম্পাসের একটা অংশ। আমাদের প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে তাদের গুরুত্ব অপরিসীম। জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে পশুপাখিকে সবার আগে সংরক্ষণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মিলে হাত বাড়িয়ে দিলে পশুপাখিরা ক্যাম্পাসে সুষ্ঠুভাবে বিচরণ করতে পারবে। ক্যাম্পাসের পশুপাখিগুলো পাশে দাঁড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলকে আহ্বান জানান তিনি।

ডাইনিং-ক্যান্টিনের উচ্ছিষ্ট খাবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের উচ্ছিষ্ট খাবার পশুপাখিকে না দিয়ে বিক্রি করে দেয় এ বিষয়ে আমরা নজর দিবো। উচ্ছিষ্ট খাবার পশুপাখির জন্য রাখতে হবে। এগুলো কোথাও বিক্রি করা যাবে না।


সর্বশেষ সংবাদ