জাবিতে মসজিদ নির্মাণে কচ্ছপগতি, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
নির্মাণকাজ শুরুর ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সম্পন্ন হয়নি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আ ফ ম কামালউদ্দিন হল ও শহীদ সালাম-বরকত হল মসজিদের নির্মাণ কাজ। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমনিতেই নিয়মিত নামাজেই জায়গা সঙ্কটে ভোগান্তি পোহাতে হয়, তার উপর আরো বেশি ভোগান্তি হয় জুমার নামাজের দিন। আর এখন রমজান মাস হওয়ায় তারাবী নামাজের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে তাদের। তারাবীর নামাজের সময় অনেক শিক্ষার্থীকে নামাজের জায়গার সঙ্কটে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
এদিকে, একসঙ্গে মাত্র ৫ জনের ওযু করার সক্ষমতা থাকায় ওযু করতেও দীর্ঘ লাইন ধরতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া নির্মাণকাজে মাটি উত্তোলনের ফলে হালকা বৃষ্টিতেই কাদা মাটিতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েন নামাজ পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা।
দুটি হলের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করতে প্রশাসনকে আরও উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী পারভেজ মাহমুদ বলেন, দুই হলের একই মসজিদ হওয়াতে এখানে চাপ বেশি হয়। শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করতে গেলে প্রায় সময়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। মসজিদের বাইরে নামাজ পড়তে গেলেও একটু বৃষ্টিতেই কাদা হয়ে যায়। আবার নির্মাণ স্থলের চারদিকে কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাাকায় নামাজ পড়তে এসে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতেও থাকতে হয়।
আরও পড়ুন: উপাচার্যের মেয়ের ফল নিয়ে বিভক্ত জাবি শিক্ষকরা, পাল্টাপাল্টি বিবৃতি
আ ফ ম কামালউদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রেজোয়ান হাসান বলেন, ইতিমধ্যে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। স্বভাবিকভাবেই এ মাসে ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি ঝোঁক বেশি থাকে। কিন্তু এখানে শিক্ষার্থীদের নামাজে দাড়ানোর পর্যাপ্ত কোনো জায়গা নাই। এমনকি ওযু করতে গেলেও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
তবে মসজিদ নির্মাণে দায়িত্বরত ঠিকাদার সেলিম প্রামাণিক দায় চাপিয়েছেন অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দীনের কাঁধে। তিনি বলেন, মসজিদ নির্মাণের কাজ অনেকদিন আগে শুরু হলেও মসজিদের একটি বীমের স্থানে পানির পাইপ লাইন ছিল। এটা না সরানো পর্যন্ত বীম নির্মাণ সম্ভব ছিল না।
তিনি বলেন, এটা সরানো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পের কাজ ছিল। কিন্তু প্রকল্প থেকে পানির লাইনটি দ্রুত সরানোর জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। প্রকল্প অফিসের লোকেরা একদিন এসে দেখে গেলে আবার ছয়দিন কোন খবর নেয় না। এসব কারণেই মসজিদ নির্মাণের মূল কাজে এত দেরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. নাসির উদ্দিনকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। পরবর্তীতে আবারো যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
হল ভিত্তিক দুই বছরের দায়িত্ব শেষ হওয়ায় শহীদ সালাম বরকত হলের প্রভোস্ট সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু বলেন, মসজিদটি সালাম বরকত হল ও কামাল উদ্দিন হল উভয়কে দুই বছর করে দায়িত্ব দেওয়া থাকে। গত দুই বছর এটি আমার দায়িত্বে ছিল। এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকে আমার দায়িত্ব শেষ হয়েছে। তাই মসজিদ নির্মাণে অগ্রগতির বিষয়ে আমার থেকে কামাল উদ্দিন হলের প্রভোস্ট ভালো বলতে পারবেন।
তবে আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রভোস্ট আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সর্বোচ্চ কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, শুরুতে বাজেট সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে কাজ দেরিতে শুরু হলেও এখন কাজের অগ্রগতি ভালো। এছাড়া দুইটি হলের সম্মিলিত মসজিদ হওয়াতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে হলের শিক্ষক ও ছাত্রদের সাথে মিটিং করতে হয়। এজন্য সহজেই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না।
তবে এ নিয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ ও উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও পাওয়া যায়নি।