ঢাবি ছাত্রদের মারধরের পেছনে ক্যাম্পাসভিত্তিক ভয়ঙ্কর গ্যাং
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলপাড়া এলাকায় একদল যুবক প্রকাশ্যে তিন শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছে। শনিবার (২৫ মার্চ) রাত ৮টার দিকের এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন জোবায়ের ইবনে হূমায়ুন নামে এক শিক্ষার্থী। অন্য দুজন খালিদ মাহম্মুদ মিরাজ ও মো. রোকনুজ্জামান খান। আহত তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে সক্রিয় একটি গ্যাংয়ের অপকর্মে জড়ানোর বিষয়টি সামনে এসেছে। জানা গেছে, প্রলয় নামের এ গ্যাংয়ের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। তারা একসঙ্গে ঘুরে বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার তাদের মূল আস্তানা। গ্রুপ ছবি তুলে নিয়মিত ফেসবুকে পোস্ট করেন। প্রশাসনও গ্রুপটি শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী খালিদ মাহম্মুদ মিরাজ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমরা ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন বন্ধু মিলে ইফতার করার জন্য এক হই। ইফতার শেষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে বসি। তখন এ রাস্তা ধরে একটা প্রাইভেট কার ওভার স্পিডে যাচ্ছিল। এ কারণে কাঁদা ছিটকে আমাদের শরীরে লাগে। তখন সচেতনতার জায়গা থেকে গাড়িটাকে একটা কিছু বলতে যাচ্ছিলাম। তবে গাড়িটা না দাঁড়িয়ে টান দিয়ে চলে যায়।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর আমরা কার্জনে গিয়ে দেখলাম সেই গাড়ি। গাড়ির জানালা দিয়ে দেখলাম ঢাবির লোগোওয়ালা টি-শার্ট। তখন বুঝে গেলাম ক্যাম্পাসেরই কেউ। তাছাড়া তাদেরও কয়েকজন আমাদের চেনে। তখন বললাম, গাড়ি এভাবে ওভার স্পিডে চালাচ্ছিস কেন? যেকোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেহেতু ব্যাচমেট, তাই নরমাল কথাবার্তা হলো। এসময় তাদেরকে মদ্যপ অবস্থায় দেখা যায়। তবে ওই জায়গা থেকে চলে আসি। যে যার যার মতো হলে চলে যাই। আমি ও জোবায়ের (মারধরের শিকার) জসীমউদ্দিন হলে চলে আসি।
তিনি আরও জানান, হলে আসার পর জোবায়েরের ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা কল আসে। কল দিয়ে জোবায়েরকে বলে কই আছিস? জোবায়ের বলে, আমি জসীমউদ্দিন হলে। তখন অপরপ্রান্ত থেকে বলে জসীমউদ্দিন হলের সামনে আয়, কথা বলবো। আমরা ভাবছি নরমাল কথাবার্তা হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ার মতো সেইফ জায়গায় এমন অ্যাটাক হবে আমরা কল্পনাও করিনি। হল থেকে বের হয়ে দাঁড়াই।
ভুক্তভোগী ছাত্র বলেন, ২০-৩০ জন এসে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ওদের হাতে স্টাম্প, বাঁশ ও রড ছিল। সবচেয়ে বেশি মারা হয়েছে জোবায়েরকে। আমাকে এবং আমার ডিপার্টমেন্টের বন্ধু রোকনকে মারধর করেছে। তবে আমরা একটু দূরে চলে যাওয়ায় বেচে গেছি। তবে জোবায়েরকে ২০-৩০ জন মিলে ৬-৭ মিনিট টানা মেরেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফয়সাল আহমদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এরকম ঘটনা ক্যাম্পাসে আগে কখনো দেখিনি। জোবায়ের নামে এক শিক্ষার্থীকে ২০-৩০ জন মিলে প্রায় ১০ মিনিটের মতো মেরেছে। আরেকটু মারলে মারা যেত।
জানা যায়, ওই প্রাইভেট কারের ভিতরে ছিল জিয়া হলের ফয়সাল আহমেদ সাকিব, জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আব্দুল্লাহ আল আরিফ, জসীমউদ্দিন হলের রহমান জিয়া ও নাইমুর রহমান দুর্জয়।
ভুক্তভোগীদের বর্ণনা অনুযায়ী মারধরে অংশগ্রহণ নেন- মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের তবারক, সিফরাত সাহিল, মোহাম্মদ শোভন, সৈয়দ নাসিফ, কবি জসীমউদ্দিন হলের সাদ, মোশাররফ হোসেন, ফেরদৌস আলম ইমন, ফারহান লাবিব, হেদায়েতুন নুর, সাদমান তাওহিদ বর্ষণ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবু রায়হান ও অর্ণব।
আরও ছিলেন জিয়া হলের ফয়সাল আহমেদ সাকিব, জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আব্দুল্লাহ আল আরিফ, জসীমউদ্দিন হলের রহমান জিয়া ও নাইমুর রহমান দুর্জয়। তবে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, একটি গ্রুপকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শনিবারের ঘটনাটিও ব্যক্তিগত বিষয় থেকে হয়েছে। প্রাধ্যক্ষকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।