শিক্ষার্থীরা গণরুমে, ছাত্রলীগ নেতার ‘ভর্তিচ্ছু ছোটভাই’ সিঙ্গেল সিটে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের কপালেও একটি সিঙ্গেল সিট না জুটে না। কিন্তু শিক্ষার্থী না হয়েও হলের সিঙ্গেল সিটে থাকেন বহিরাগত একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। কারণ তিনি শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার ‘ছোটভাই’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ৪০৯নং কক্ষে থাকেন রাকিবুল ইসলাম এজাজ নামের ওই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। ভোগ করেন হলের সকল সুযোগ সুবিধা। তার বড়ভাই শাখা ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় সব জেনেও ভয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেউ মুখ খুলতে সাহস করেন না।
অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম তাওহীদুল ইসলাম জিহাদ। তিনি একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের ৪৬ ব্যাচের (সেশন ২০১৬-২০১৭) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। শাখা ছাত্রলীগের উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। জিহাদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আপন ছোটভাইকে মাসের পর মাস এই নেতা হলে রাখছেন বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হলের পলিটিক্যাল ব্লকের ২৩৫নং কক্ষের থাকেন ছাত্রলীগের এই নেতা। ছোটভাইকে কিছুদিন নিজ রুমে রেখে দুই সিট বিশিষ্ট ৪০৯নং কক্ষের এক সিটে ভাইকে রাখার বন্দোবস্ত করেন। তখন থেকে প্রায় ৩ মাস যাবৎ এই রুমেই থাকছেন এজাজ। ২০২২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি এই রুমে থেকেই নিচ্ছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই হলে নিচতলায় ৫১ ব্যাচের নবীন (প্রথম বর্ষ) শিক্ষার্থীরা হলের গণরুমে একসাথে গাদাগাদি করে ৭০-৮০ জন থাকেন। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা দুই আসন বিশিষ্ট এক রুমে ৮-৯ জন মেঝেতে ফ্লোরিং করে থাকেন। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা দুই আসন বিশিষ্ট এক রুমে থাকেন ৪-৫ জন করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আ ফ ম কামালউদ্দীন হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, আমি বেশ কয়েক মাস ধরে ছেলেটাকে হলেই দেখছি। প্রথমে ভাবতাম সে কারও অতিথি হিসেবে বেড়াতে এসেছে। কিন্তু কয়েকমাস পরও যখন তাকে এই রুমে দেখি তখন কৌতূহলবশত পরিচয় জানতে চাই। তখন তিনি নিজেকে ছাত্রলীগের পলিটিক্যাল ব্লকের জিহাদের ছোটভাই হিসেবে পরিচয় দেয়। এই রুমে কিভাবে থাকে জানতে চাইলে তার ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলেন তিনি।
এ বিষয়ে জিহাদ বলেন, আমার ছোটভাই আমার কাছে ঘুরতে এসেছিল। সে এখন হলে থাকে না। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের পাশে বন্ধুদের সাথে একটি মেসে থাকে।
জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
আ ফ ম কামালউদ্দীন হলের প্রভোস্ট আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমি এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না। খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।