পাঁচ দশকেও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়া হতাশাব্যাঞ্জক: অধ্যাপক শাহ্ আজম
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আজম বলেছেন, ৫টি দশক পেরিয়ে গেলেও আমরা পাকিস্তানিদের নারকী হত্যার স্বীকৃতি পাইনি। ব্রাজিলে একটি গোষ্ঠীকে নিধন করার জন্য ১৮ জনকে হত্যা করা হয়েছিল, পরবর্তীতে তা কোর্টে জেনোসাইড হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে সামরিক অভিযানটি পরিচালনা করেছিল সেখানে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে 'ওয়ান বাংলাদেশ'র আয়োজিত এক বিশেষ আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ড. শাহ আজম আরও বলেন, শুধু ২৫ মার্চই নয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯ মাসে যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তারপরও কেন এটিকে গণহত্যা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হবে না? জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন অনুসারে দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানান তিনি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী চিকিৎসক ডা. এ.এফ.এম. আবদুল আলীম চৌধুরীর কন্যা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা বলেন, খুবই দুঃখ লাগে যখন কেউ কেউ প্রশ্ন উঠান, এটি কি আদৌ গণহত্যা হয়েছিল? ৫ দশক পেরিয়ে গেলেও গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। জাতীয় গণহত্যা দিবসটি কার্যকর হয় ২০১৭ সালে। কিন্তু এটি নিয়ে এখনও অনেকের ধারণাগত অস্পষ্টতা আছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে ডা. নুজহাত বলেন, একজন বিরোধী দলীয় নেতা হয়ে হত্যার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু এখন তো আমাদের দেশের বধ্যভূমিগুলোর ম্যাপিং হচ্ছে, সেগুলোর পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে যে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। সুতরাং সংখ্যা নিয়ে কোনো কুতর্ক বা বিতর্কের সুযোগ নেই।
গণহত্যাকে স্বীকৃতি না দেবার পিছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে উল্লেখ করে আলোচনা সভার আরেক বক্তা তারানা হালিম বলেন, আমাদের দেশের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হয়েছে। এতে করে তৈরি হয়েছে একটি বিভাজন। যার নেতৃত্বে আছে জামায়াত-শিবির।
আরও পড়ুন: পুলিশের গুলিতে আহত রাবির তিন শিক্ষার্থীকে ভারতে নেওয়া হচ্ছে
বর্তমান তরুণ প্রজন্ম সামাজিকভাবে জামায়াতকে বয়কট করেছে। আমরা কোনো দাওয়াতে, কোনো আত্মীয়তার সম্পর্কে জামায়াত-শিবিরের সাথে একত্রিত হতে রাজি নই। এইভাবেই তাদের বয়কট করতে হবে।
তারানা হালিম আরও বলেন, একটি মানুষকে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড হয়। আমার দেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষকে যারা হত্যা করেছে, হত্যাকাণ্ড সহযোগিতা করেছে, তাদের কেন ক্ষমা করে দিব? যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা ভি চিহ্ন দেখিয়ে আমাদেরকে ব্যাঙ্গ করেছে, তাকে ক্ষমা করে দিব? এসময় তিনি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে আহবান জানান।
রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আন্তর্জাতিক মহলকে তো আমরা দাবি জানাচ্ছি কিন্তু আমরা বাঙ্গালিরা সবাই কি বলছি গণহত্যা হয়েছে? ১৯৭১ সালে তো রাজাকার, আল-বদর এত ছিল না, কীভাবে ওরা পরবর্তীতে সংগঠিত হলো? বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও, তাঁর আলো সর্বত্র বিরাজমান। সেই আলো দিয়েই আমরা সকল বাঁধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাব।