বরাদ্দ সিটে উঠতে ছাত্রলীগের বাধা, মেঝেতে থাকছেন রাবি প্রতিবন্ধী ছাত্র
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলে নিজের বরাদ্দ করা সিটে উঠতে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে গত চার মাসে চারবার তার জন্য বরাদ্দ করা সিট পরিবর্তন করা হলেও তিনি সেখানে থাকতে পারেননি। ফলে বাধ্য হয়ে হলের মেঝেতে থাকছেন তিনি। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে হল প্রাধ্যক্ষ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ তার।
ভুক্তভোগী নাদিম আলী আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার নাদেরাবাদ গ্রামে। দিনমজুর বাইরুল ইসলামের ছেলে তিনি। বর্তমানে তিনি হলের ২৫৫ নম্বর হলের মেঝেতে থাকছেন।
চার বছর বয়সে বাম পা বিকল হয় নাদিমের। ডান পায়ে ভর করে হাঁটেন তিনি। দরিদ্র পরিবারে অনেক সংগ্রাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু হলে উঠার পর বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তার। চারবার হলের এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে বরাদ্দ দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ। একাধিকবার এভাবে হলের সিট পরিবর্তন করায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
নাদিম অভিযোগ করে বলেন, গত ২৭ নভেম্বর হলের তৃতীয় ব্লকের নিচ তলার ১৫২ নম্বর কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।। কিন্তু ছাত্রলীগের হল সভাপতি নাঈম নামের এক শিক্ষার্থীকে ওই সিটে তোলেন। এতে দুই মাসও ওই কক্ষে থাকতে পারিনি আমি। এ সময় প্রাধ্যক্ষকে আবাসিকতার বিষয়টি জানালে আমার সঙ্গে তিনি দুর্ব্যবহার করেন।
হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলী বলেন, আমাদের কমিটিরই এক ছোট ভাই ওই কক্ষে ছিলো। প্রাধ্যক্ষ স্যার নাদিম আলীকে সেখানে রুমের সিট বরাদ্দ দেন। পরে আমি প্রাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলে অন্য কক্ষে তার সিট পরিবর্তন করে দিই।
নাদিম বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি ২৩৪ নম্বর কক্ষে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই কক্ষে আগে থেকেই দুই আবাসিক শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২৫৫ নম্বর কক্ষে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই কক্ষে বর্তমানে মেঝেতে থাকছি। কিন্তু ওই সিটে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাছান।
এ বিষয়ে মেহেদী হাছান বলেন, আমি এক বছর ধরে ওই সিটে অবস্থান করছি। প্রাধ্যক্ষ আমাকে সিট বরাদ্দ দেবেন বলে জানান, কিন্তু দেননি। আমার কোনো আবাসিকতা নেই।
গত ৬ মার্চ ২২৭ নম্বর কক্ষে নাদিমকে আবারও সিট বরাদ্দ দেন প্রাধ্যক্ষ। নাদিমের অভিযোগ, ওই সিটে উঠতে নিষেধ করে হুমকি দেন ১০৫ নম্বর কক্ষের ছাত্র নুর আলী। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলী অনুসারী বলে নিশ্চিত করেছেন হলের সুপার ভাইজার মামুনুর রহমান।
অভিযোগের বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ আলী বলেন, ওই কক্ষে আমার এক ছোট ভাইয়ের ওঠার কথা ছিলো। কিন্তু হল প্রাধ্যক্ষ ইতোমধ্যে দুজনের সিট বরাদ্দ দিয়েছেন। নুর আলীর হুমকির বিষয়ে কিছু জানি না।
হলে ওঠার বিষয়ে নাদিম বলেন, ২০২২ সালে রমজান মাসের প্রথমদিকে হলে ওঠার জন্য আমি আবেদন করি। প্রাধ্যক্ষ আমাকে বলেন প্রথমবর্ষে পড়ি বলে এতো তাড়াতাড়ি হলে ওঠানো সম্ভব না। আমি প্রাধ্যক্ষকে জানায়, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় হলের সিটে আমার কোটা আছে। কিন্তু প্রাধ্যক্ষ ফোন নম্বর দিতে বলেন। বলেন সিট খালি হলে কল দেবো। কিন্তু আমাকে সিটের জন্য কল করেননি তিনি। পরে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিডিএফের (ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট) সুপারিশের মাধ্যমে গত বছরের ২৬ নভেম্বর প্রাধ্যক্ষের কাছে আবেদন করে সিট পাই।
হল প্রাধ্যক্ষ সুজন সেন বলেন, ওই ছাত্রকে আমি সিট দিয়েছি। বিভিন্ন কারণে তার সিট পরিবর্তন করা হয়েছিল। হলে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।