রাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি রাসিক মেয়রের
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ও রেললাইনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরবর্তীতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সেক্ষেত্রে সবাইকে আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে।
সোমবার (১৩ মার্চ) রাজশাহীতে ‘অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। মহানগরীর শিক্ষাবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট নাগরিক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও নারী নেত্রীদের নিয়ে রাসিকের নগর ভবনের সিটি হলরুমে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বিএনপি বলেছে তারা আওয়ামী লীগের সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসবে না, নির্বাচন হতে দেবে না। তাদের এই কথার মধ্যে যে নাশকতার মতলব আছে, সেটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীকে আর কখনও ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। রাজশাহীতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলোকে আরও সুসংগঠিত করা হবে। যাতে যখনই প্রয়োজন হবে, আমরা সবাই একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি। আগামীতেও এই ধরনের সভার আয়োজন করা হবে।
সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল খালেক বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির শিকড় অনেক গভীরে। তাদের মধ্যে জামায়াত-শিবির ঢুকে পড়ে। তাদেরকে হাল্কাভাবে নিলে হবে না। তাদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে দূর সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়াতে হবে।
সভায় রাবি উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ধর্মীয় বিভাজন ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে লাভবান হয় তৃতীয় পক্ষ। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের প্রতিহতের কাজ এখনই শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে ভাষা আমাদের সহায়ক হতে পারে। কারণ আমাদের ধর্ম আলাদা হলেও আমরা সবাই বাঙালি ও আমাদের ভাষা বাংলা। আমরা যদি বাংলা ভাষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে পারি, তাহলে ধর্মীয় অজ্ঞতা দূর করা সম্ভব হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মেয়র আমাদের পাশে ছিলেন উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে মেয়র আমাদের পাশে থাকায় ধন্যবাদ জানাই।
অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। তার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল খালেক, রাবি উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য বেগম আখতার জাহান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শামসুদ্দিন খোকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর শামসুল আলম (বীর প্রতীক), কুবিকুঞ্জের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক ও মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল সভায় উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় বাসের ভেতর এক রাবি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জের ধরে সহপাঠীরা বিনোদপুর বাজারে চালক ও হেলপারকে মারধর করেন। বাস থেকে পেটাতে পেটাতে চালককে নামিয়ে মারধর করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এতে বাধা দিলে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরোধ লেগে যায়। এরপর রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর বাজারের দোকানপাটে আগুন দিলে কয়েকজন ব্যবসায়ীও আহত হন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ইট-পাটকেলে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় রবিবার (১২ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বাদী হয়ে নগরের মতিহার থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় বিনোদপুর এলাকার ৪০০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় মো. তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি নগরের খোঁজাপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি একটি বাসের কাউন্টারের চেইন-মাস্টার; গ্রেপ্তার তসলিম প্রথমে শিক্ষার্থীদের আঘাত করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।