০৯ মার্চ ২০২৩, ১০:৩৮

ঢাবি-বুয়েট-ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেলেই কি ভর্তি হতে হবে?

বুয়েট, ঢাবি ও ঢাকা মেডিকেল থাকে ভর্তিচ্ছুদের পছন্দের শীর্ষে  © টিডিসি ফটো

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে আগামীকাল শুক্রবার থেকে ভর্তিযুদ্ধে নামছেন শিক্ষার্থীরা। এ পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল করে অনেকে চান পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। তবে এখানে এসে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেকে ধাক্কা খান। কেউ পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও বিষয় বাছাই নিয়ে পড়ে যান দ্বিধায়। আবার অনেকে একসঙ্গে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে কোনটি রেখে কোনটিতে ভর্তি হবে, তা নিয়ে পড়েন বিপাকে।

বর্তমানে প্রকৌশল শিক্ষায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। একইভাবে সাধারণ ধারার শিক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চিকিৎসা শিক্ষায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এসব প্রতিষ্ঠানে চান্স পেলেই কি ভর্তি হতে হবে? এক্ষেত্রে অন্য কোনও বিষয় বিবেচ্য হবে?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেডিকেল শিক্ষায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ এক প্রকার অটো চয়েজ। কারণ সুযোগ-সুবিধা বা শিক্ষার মানের দিক থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের সেরা হিসেবে বিবেচিত। তবে প্রায় সমমানের আরও বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ আছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় বা বুয়েটের সেরা বিষয়গুলোতে চান্স পেলে মেডিকেল ছেড়ে এ দুই বিশ্ববিদ্যালয় বা কাছাকাছি মানের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন অনেকে।

একইভাবে বুয়েটে চান্স পেলেও ভর্তি অনেকটা অটো চয়েজ হয়ে গেছে। এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেলে সাধারণত অন্য কোথাও যেতে চান না ভর্তিচ্ছুরা। তবে কাছাকাছি মানের প্রতিষ্ঠানে যেমন রুয়েট, কুয়েট, চুয়েটে ভালো বিষয় পেলে তা গ্রহণ করার নজির আছে। মেডিকেল বা ঢাবির সেরা বিষয়গুলো পেলেও অনেকে সেদিকে ঝোঁকেন। বুয়েটে চান্স পেলেই অগ্রাধিকার পায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

এ দুই প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পরিবেশ কিছুটা বদলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া কয়েকজন বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেই ভর্তি হলেই চান্স পেতে হবে, এমন ধারণা এখন আর নেই। কারণ আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার মান উন্নত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বিষয়ে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে।

এছাড়া একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে নিজের ক্যারিয়ার, ভালো বিষয়, গবেষণা, বিদেশে উচ্চশিক্ষা, থাকার সুবিধাসহ পারিপার্শ্বিক আরও অনেক বিষয় এখন বিবেচনায় নেন সবাই। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দিক দিয়ে বিবেচনা করে এখনো পছন্দের শীর্ষেই থাকে শিক্ষার্থীদের। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই বা পরিচিত অনেকের পরামর্শও বড় ভূমিকা পালন রাখে।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ফাতেমা নামে এক ছাত্রী চান্স পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে কিছুটা পেছনের দিকে থাকায় তিনি আর খোঁজ রাখেননি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো বিষয় পাওয়া এবং অন্যান্য সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে সেখানেই ভর্তি হন তিনি।

আশরাফুল আলম নামে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্র বলেন, ‘আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানিজ স্টাডিজ এসেছিল। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আসে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ স্বল্প সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকায় এবং এ সাবজেক্টের ভালো চাহিদা থাকায় আমার মনে হয়েছিল, এতে স্নাতক শেষ করলে ভালো ক্যারিয়ার তৈরি করা সহজ হবে। এ কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে বশেমুরবিপ্রবিতে ভর্তি হই।’

আরো পড়ুন: যেভাবে প্রস্তুতি নিলে চান্স পাবেন গুচ্ছের ‘সি’ ইউনিটে

রোকসানা মীম নামে এক ভতিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ধারণা কম। সে জন্য আমার পরিবার বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বড় ভাই যেভাবে পরামর্শ দেবেন, সে আলোকেই ভর্তি হবো।’

এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় যারা সাবজেক্ট পাওয়ার মতো পজিশনে থাকে, তাদের জন্য দু’টি কথা-

১. তোমার ট্যালেন্ট খোঁজো, কোথায় তোমার দক্ষতা বেশি সে অনুযায়ী সাবজেক্ট নাও, আবেগ তাড়িত হইও না। আর তোমার সিরিয়াল যদি ভাগ্যক্রমে মেরিট লিস্টের পেছনে হয়, তাহলে প্রাপ্তি সম্ভাব্য বিয়ষটি তোমার দক্ষতার সাথে কতটুকু যায় এবং কতটুকু তোমাকে ওই বিষয়টি দিতে পারবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানো এবং ভাবো। যদি মিলে যায় তাহলে তোমার কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সে বিষয়ে পড় এবং সর্বোচ্চ পরিশ্রম দাও। আর যদি নির্দিষ্ট কোনও পেশা তোমার পছন্দ থাকে, তাহলে সে বিষয়ে যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাও তাহলে ভর্তি হও।

২. কোন বিশ্ববিদ্যালয় তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার পরিবেশ করে দেবে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হও। এমন কোনও প্রতিষ্ঠানে যাওয়া সাহসাই ঠিক হবে না, যে প্রতিষ্ঠান তোমাকে অনার্স পাস করার পরেও ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা শেখায় না। তাই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তোমার ভবিষ্যত নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না সেখানে ভর্তি হও।

ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে সবারই পড়ার ইচ্ছা বা আগ্রহ অনেক বেশি। অনেকেই এজন্য ভালো করে পড়লেও ভাগ্যের মারপ্যাচে চান্স পেলেও খুব দুর্বল সাবজেক্ট পায়। অনেকের ঢাবির প্রতি ভালোবাসা অনেক বেশি হওয়ায় এসব সাবজেক্টেই ভর্তি হয়। যদিও তার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বা সাইন্সের ভালো সাবজেক্ট পেয়ে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, কারও এমন ভাবা উচিত না যে ঢাবিতেই পড়তে হবে, বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছু না। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি মানসম্পন্ন সাবজেক্ট পাওয়া যায়, ঢাবিতে একেবারে দূর্বল সাবজেক্টে ভর্তি না হওয়াই উচিত। ভর্তি হলেও পরবর্তীতে দেখা যায়, সে সারাবছর হতাশায় ভোগে, কেন সে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এত ভালো বিভাগ পেয়েও ভর্তি হলো না।’